বৃটেনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সিলেটের ‘কোটি মানুষ’
মারুফ খান মুন্না ::
কয়েক লাখ সিলেটি বসবাস করেন স্বপ্নের শহর লন্ডনে। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বৃটেনের সঙ্গে সিলেটের সম্পর্ক (আত্মার সম্পর্কে) পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে সিলেট ও বৃটেন যেন একই সুতোয় গাঁথা। সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা গাথাও একসঙ্গে। সিলেটের মানুষ সম্পর্কের কারণেই এতোদিন বাংলাদেশে নির্বাচন হলেই ছুটে আসতেন হাজার হাজার লন্ডন প্রবাসী। কেউ কেউ বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছেন। কিন্তু এবার বৃটেনের নির্বাচন নিয়ে সিলেটের স্থানীয় মানুষের কাছে আগ্রহ বেশি।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লড়ছেন ১৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এদের ৮জন লড়ছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হয়ে। ৪জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, লিবারেল ডেমোক্রেট ও ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে লড়ছেন ১জন করে।এদের মধ্যে রোশনারা আলী সিলেটের বিশ্বনাথের, ড. রূপা আশা হক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর গ্রামের, একই গ্রামের ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল, হবিগঞ্জের নবিগঞ্জ উপজেলার বদরদি গ্রামের ফয়ছল চৌধুরী এমবিই, ডিস্ট্রিক কাউন্সিলর জগন্নাথপুরের সৈয়দ সাজু মিয়াসহ ১৪ জনের ৬ জনই সিলেটী। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই বৃটেনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলদেশের দ্বিতীয় লন্ডনখ্যাত এলাকা সিলেটের কোটি মানুষ।
বৃটেনের নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে সিলেটের প্রবাসী পরিবারে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। আর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে সিলেট থেকে বৃটেন ছুটে গেছেন অনেকেই। তারা পছন্দের সিলেটি প্রার্থীর পক্ষে বিশেষ করে বাঙালি কমিউনিটির কাছে প্রচারণা চালিয়েছেন। জয় ঘরে তুলতে তারা অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে হঠাৎ মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিছুদিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে এক ঘোষণায় ৮ জুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। বৃটেনের পরবর্তী নির্বাচন ২০২০ সালে হওয়ার কথা ছিল। গত জুন মাসে ব্রেক্সিট অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার প্রশ্নে বৃটেনে গণভোটের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরন পদত্যাগ করার পর তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হন। গত কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রী মে একাধিকবার মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও হঠাৎ জাতীয় স্বার্থেই এই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি বলে জানা গেছে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণার পর পরই সিলেটে বৃটেনের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যে কয়েকজন এমপি প্রার্থীদের স্বজনেরা সিলেটে অবস্থানরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পরিবারের সাথে যোগাযোগও করেছেন। তাছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে সিলেট থেকে বৃটেন ছুটে গেছেন অনেকেই। চালাচ্ছেন পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা।
৮ জুন বৃহস্পতিবার এই ভোট যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। ইতমধ্যে ডাকযোগে ভোটদান শুরু হয়েছে। ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টের ৩৩১টিতে জয়ী হয়ে গতবার সরকার গঠন করেছিল কনজারভেটিভরা। ২০১৫ সালের ওই নির্বাচনে লেবার পার্টির হয়ে লড়েছিলেন ৫জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি, যাদের ৩ জনই জয়ী হন। তবে কনজারভেটিভ দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একমাত্র ব্রিটিশ বাংলাদেশি পরাজিত হয়েছিলেন।
গতবারের বিজয়ী সিলেটের রুশনারা আলী, রুপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক এবারো লেবারের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের সঙ্গে এই দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার বাবুল মিয়া, মেরিনা আহমদ, রওশন আরা, ফয়সল চৌধুরী এমবিই ও আবদুল্লাহ রুমেল খান।লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাজু মিয়া; ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে লড়ছেন আফজল চৌধুরী।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বাংলাদেশি প্রার্থীর নাম ও আসন: রুশনারা আলী (লেবার, বেথনাল গ্রীন অ্যান্ড বো আসন), রূপা হক (লেবার, ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন), টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিক (লেবার, হ্যাম্পস্টেট অ্যান্ড কিলবান, আনোয়ার বাবুল মিয়া (লেবার, ওয়েলউইন অ্যান্ড হ্যাটফিলড), মেরিনা আহমদ (লেবার, বেকেনহাম), রওশন আরা (লেবার, সাউথ থেনেট), ফয়সল চৌধুরী এমবিই (লেবার, স্কইল্যান্ডের এডিনবারা সাউথ ওয়েস্ট), আবদুল্লাহ রুমেল খান (লেবার, পোর্টসমাউথ নর্থ), সাজু মিয়া (লিবডেম, ওয়াইর ফরেস্ট), আজমল মাশরুর (স্বতন্ত্র, বেথনালগ্রীন অ্যান্ড বো), ওলিউর রহমান (স্বতন্ত্র, পপলার এন্ড লাইম হাউজ), আবু নওশাদ (স্বতন্ত্র, ইয়ার্ডলি, বার্মিংহাম), ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর (স্বতন্ত্র, ইস্টহাম), আফজল চৌধুরী (ফ্রেন্ডস পার্টি, ইস্টহ্যাম)। হাউস অব কমন্সে শেষপর্যন্ত কতজন বাঙ্গালী প্রার্থী জায়গা করে নিতে পারেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৮ জুনের নির্বাচনের ফলাফলের উপর।