বেসরকারি শিক্ষক আন্দোলন ও অব্যক্ত বেদন
মো.মশিউর রহমান-
সারা দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্যে আন্দোলন করছেন। এটি তাদের নায্য ও যৌক্তিক দাবি।দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি পাঁচ লক্ষাধিকের উপরে শিক্ষক ও কর্মচারীদের দূর্ভোগ একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন। সরকারের এ দিকে কোন দৃষ্টি নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ বেতন সরকারি খাত থেকে দেয়া হলেও নেই বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, নেই ধারাবাহিক পদোন্নতি, আছে শুধু জীবেন একবার পদোন্নতি তাও আবার এটা কোটা প্রথার বেড়াজালে বন্ধি। নেই বৈশাখি ভাতা, প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া নির্ধারিত( শিক্ষক-কর্মচারী) ১০০০/= ও মেডিকেল ভাতা ৫০০/= টাকা।উৎসব ভাতা স্কেলের সিকি ভাগ। মৃত্যুর পূর্বে পাওয়া যাচ্ছে না অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাষ্টের টাকা। বেসরকারি শিক্ষকদের না পাওয়ার পাল্লাটাই যেন ভারী। বিষয়টি এমন দাড়িয়েঁছে যে কাজ করবেন কিন্তু মজুরী পাবেন না। পেলেও পর্যাপ্ত নয়। আর দেশ ব্যাপী ননএমপিও লক্ষাধিক শিক্ষক তো বিনা বেতনে বছরের পর বছর শিক্ষাদান করছেন। এমপিওভুক্তির আশায় জীবন পার করছেন। কিন্তু কোন আশার বানী শুনছেন না। এর চেয়ে অমানবিকতা আর কি হতে পারে। শিক্ষা পরিবারের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যাক্তির কাছে প্রশ্ন শ্রম নিচ্ছেন কিন্তু শ্রমের কোন মূল্য দিচ্ছেনা। বেতন দিবেন না কিন্তু বলবেন নির্ধারিত সময়ের বাহিরেও বা কারো বাসায় গিয়েও প্রাইভেট পড়ানো যাবে না। এ কেমন নীতি? প্রাইভেট কি কেহ সাধে পড়ায়। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতিতে জীবন বাঁচানোর জন্যে কেহ কেহ অবসরে প্রাইভেট টিউশনি করেন। অন্য পেশার লোকজন তো অফিস আওয়ারেও প্রাইভেট প্রেকটিস চালিয়ে যান। আপনারা বাহবা দেন। তখনতো কোন অন্যায় হয় না। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। যত দোষ নন্দ ঘোষ। শিক্ষক সম্প্রদায় বরাবরেই দূর্বল। তাদের অধিকারের কথা বলতে পারেন না। সব কিছুই সহ্য করে যায়। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নেই। একাডেমিক ভবন নেই। তবুও শিক্ষার উন্নয়ন চাই। কিভাবে সম্ভব? আগে শিক্ষকদের সকল নায্য দাবিগুলো মেনে নিন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো দূর করুন। তারপর প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং বানিজ্য বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সবাই মেনে নেবে। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ শহরে পৌর কলেজে পাখির খাঁচার মতো দুটি কক্ষে গত ২২ বছর ধরে চলছে কলেজের পাঠদান। পাঠদানের জন্যে কোন ভবন নেই। ছাত্র ছাত্র্রী পনেরশ এর অধিক। একটি জেলা শহরের এমন অবস্থা হবে কেন? সারা দেশের একই চিত্র। কোথাও কম কোথাও বেশি। অবকাঠামেরা উন্নয়ন নেই, শিক্ষকদের বেতন নেই কিন্তু শিক্ষার উন্নয়ন চাই। ধর্মে আছে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই মজুরী পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এসব শিক্ষকের শ্রমের উপরেই দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা দাড়িঁয়ে আছে। ভাবতে কেমন লাগে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন ঠিক এই সময়ে তার হাতে গড়া একজন ছাত্র তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে যোগদান করে সমপরিমান বেতন পাচ্ছে। এটা কি কোন নিয়ম? এ যেন এক প্রহসন বৈ আর কিছুই নয়। অথচ দেশের সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৮ ভাগই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষার উপর নির্ভরশীল। একজন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে এ বেদনা কাউকেই বোঝানোর নয়। বেসরকারি শিক্ষক হওয়া যেন আজন্ম পাপ। কখন এ পাপ থেকে মুক্ত হবেন শিক্ষকেরা? সরকারের উচিত দেশের তালিকাভুক্ত সকল ননএমপিও ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে সরকারিকরণের মাধ্যমে শিক্ষাকে একটি প্লাট ফর্মে নিয়ে আসা।তখনই শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব।অন্যতায় শিক্ষকগণ তাদের অধিকার আদায়ে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে দাবি আদায়ে রাস্তাতেই বেশি সময় কাটাবেন। বিষয় এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। লেখক, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, দিগেন্দ্র বর্মন ডিগ্রি কলেজ, বিশ্বম্ভরপুর,সুনামগঞ্জ।