ব্রিটেনে শিশুদের পাসপোর্টে পরিবর্তন চান টিউলিপ
ব্রিটেনে বিরোধী লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক শিশুদের ব্রিটিশ পাসপোর্টে কিছু পরিবর্তনের দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলছেন, পাসপোর্টে যদি পিতামাতা দু’জনেরই নাম থাকে তাহলে অনেক সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে পাসপোর্টে শুধু শিশুর নামই উল্লেখ করা থাকে। সেখানে বাবা কিম্বা মা কারো নামই উল্লেখ থাকে না। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক তার বাচ্চা ও স্বামীকে নিয়ে সম্প্রতি হলিডে থেকে ব্রিটেনে ফিরে আসার সময় তিক্ত এক অভিজ্ঞতার মুখে পড়ার পর পাসপোর্টে এই পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্যা এই টিউলিপ সিদ্দিক। সম্প্রতি তিনি তার বাচ্চা মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী কর্মীরা তাকে ট্রেনে উঠতে দিচ্ছিলেন না। কারণ বাচ্চার নামের যে পদবী তার সাথে বাচ্চার নামের পদবীর মিল ছিলো না। হোম অফিস বলছে, শিশু পাচার বন্ধ করার জন্যে মা ও শিশুর পদবীতে মিল না থাকলে মায়েদেরকে এভাবে আটকে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এটা করা হয় শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উদ্দেশে। টিউলিপ সিদ্দিক বলছেন,গত পাঁচ বছরে এরকম ছ’লাখ নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বাচ্চার সাথে তাদের সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্যে। এজন্যে অনেককেই, যাদের কাছে তখন বিয়ের কিম্বা জন্মের সার্টিফিকেট ছিলো না এবং স্বামী কিম্বা পার্টনারকে ছাড়া ভ্রমণ করছিলেন, তখন তাদেরকে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, এরকম ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে কারণ অনেক নারীই এখন বিয়ের পর তাদের নামের পদবী বদলাতে চান না। এক জরিপ বলছে, প্রত্যেক সাতজন নারীর একজন বিয়ের পর তাদের পরিবারের দেওয়া পদবীটাই রেখে দিতে চান। আর ৪ শতাংশ নারী তাদের বাচ্চার নামের সাথে স্বামীর পরিবর্তে নিজের পদবীই জুড়ে দিতে আগ্রহী। এই ঘটনার পর এমপি সিদ্দিক হোম অফিসে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন বাচ্চাদের পাসপোর্টে পিতা ও মাতা দু’জনের নামই লিখে দেওয়ার জন্যে, যাতে বিমানবন্দরে ও সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, “আমি জানি না পদবী পরিবর্তন না করার জন্যে আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে। আমি ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেছি, আমার নিজের একটা জীবন আছে, আমার নিজের পদবীরও একটা মর্যাদা আছে।” “আমি জানি কেন তাদেরকে থামানো দরকার। অসহায় শিশুরা যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্যেই এরকম করা হচ্ছে। কিন্তু এটাও মানতে হবে যে বহু সন্তানের নামের সাথে তাদের মায়ের পদবী থাকে না।”
টিউলিপ সিদ্দিক জানান, ছুটি কাটিয়ে তিনি যখন ফিরে আসছিলেন তখন তার সাথে ছিলেন স্বামী ক্রিস পার্সি এবং তাদের দেড় বছরের কন্যা আজালিয়া। ছোট্ট শিশু থাকার কারণে টিউলিপ সিদ্দিককে খুব দ্রুত পার হয়ে যাওয়া যায় এমন একটি লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। কিন্তু ব্রিটেনে ফিরে আসার জন্যে ইউরোস্টার ট্রেনে উঠার আগে ইউকে বর্ডার তাকে থামিয়ে দেয়। “আমার মেয়ে দেখতে আমার চেয়ে একেবারেই আলাদা। সে তার বাবার মতো দেখতে। ইউকে বর্ডারের একজন তখন অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আমার ও আমার মেয়ের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি কে?”
“এরকম একটা প্রশ্নে আমি অবাক হই। তিনি তখন আবার জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আমার মেয়ে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আমাদের একই পদবী নেই কেন। তিনি তখন আমার বিয়ের ও জন্মের সার্টিফিকেটও দেখতে চাইলেন।” “এটা নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হলো। তারা আরো কিছু কাগজপত্র দেখতে চাইলেন। কিন্তু মেয়েটা তখন কাঁদছিলো আরা মা মা বলে ডাকছিলো। কিন্তু এতেও তারা নিশ্চিন্ত হতে পারেন নি।” টিউলিপ সিদ্দিক জানান, তখন তার পেছনে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়। এমন একটা পরিবেশের ফলে তিনি অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। “তারপর আমি যখন আমার স্বামীকে খুঁজে আনলাম তখন তারা আমাকে বাচ্চাকে নিয়ে চলে যেতে দিলেন,” বলেন তিনি। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, বাচ্চার পাসপোর্টে পিতা ও মাতা দুজনের নাম থাকলে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী লোকজনদের জন্যেও কাজটা সহজ হবে। একই সাথে আর কোন মাকেও এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
হোম অফিস বলেছে, শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব যাতে তারা পাচার কিম্বা যৌন নির্যাতনের মতো অন্যান্য অপরাধের শিকার না হয়। আর সেকারণেই শিশুটি যার সাথে ভ্রমণ করছে তার সাথে শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্যেই এরকম করা হচ্ছে। হোম অফিস বলছে, তারা এই কাজটা খুব দ্রুতই শেষ করে ফেলতে চেষ্টা করেন যাতে অভিভাবকেরা ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন। আর সেকারণেই তারা শিশুর পাসপোর্টের ‘জরুরী’ পাতায় পিতা মাতার নাম ও ঠিকানা লিখে রাখতে অনুরোধ করেছেন।