ভাটি বাংলার সিংহ পুরুষ মুহিবুর রহমান মানিক
আব্দুল মালিক:ভাটি বাংলার সিংহ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর পথিক, মুহিবুর রহমান মানিক। সুনামগঞ্জ ৫ এর ছাতক দোয়ারার বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য জননেতা মুহিবুর রহমান মানিক, বর্তমান বাংলাদেশের এম পি মন্ত্রী সহ সকল রাজনৈতিকদের যদি তাঁদের নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক জনপ্রিয়তার পরিসংখ্যা হিসাবে জরিপ করা হয়, তবে আমার মনে হয় একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার পরেই স্থান হবে যে নাম, সে আর কেউ নয়, ছাতক দোয়ারার ভাটি বাংলার সিংহ পুরুষ বঙ্গবন্ধু পথিক, মুহিবুর রহমান মানিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে কৈশোর আর যৌবন থেকে পৌড়ত্বকে যত টুকু জেনেছি খুঁজে পেয়েছি টঙ্গি পাড়ার সেই ছুট খোকা থেকে কিভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন। জননেতা মুহিবুর রহমান মানিক এর সাথে আমার ছাত্র জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় পার করেছি। আমার শ্রদ্ধেয় মামা এবং শিক্ষক তখনকার তরুণ সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ ন ম শফিকুল হকের হাত ধরে সিলেট এম সি কলেজে ছাত্রলীগে যোগদান করার পরও ছাতকের প্রতিটি আনাচে কানাচে, গ্রামের পর গ্রাম, প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ এমন কি মাসের পর মাস, যার সাথে থেকে মানুষের সাথে মিলেছি, তিনি ছিলেন আজকের জননেতা মুহিবুর রহমান মানিক। যদিও ন্যপ করতেন আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী হয়েও আমার ছাতকে উনার কর্মী ছিলাম। এই জন্য আমার প্রাণ প্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার হারিছ আলীর উনেক বকা খেয়েছি। একদিন উনার চেম্বার আম্বর খানায় ডেকে নিয়ে অনেক অনেক নসিহত দিলেন। চেম্বার থেকে বেরিয়ে এসে বন্ধু শামীম ও হাকিমকে বললাম, ডাক্তার হারিছ আলী সাহেব আমাদের রাজনৈতিক নেতা এতে কোন সন্দেহ নাই কিন্তু মুহিবুর রহমান মানিক ছাতকের গণমানুষের নেতা।
মুহিবুর রহমান মানিক বঙ্গবন্ধুর মত গ্রামের সাধারণ গরিব-দুখি, কৃষক,শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ভালবাসা নিয়ে তৃণমূল থেকে নিজেকে গড়েতুলেছেন। আমার বন্ধু বদরুজ্জামান শামীম এবং প্রয়াত বন্ধুবর আব্দুল হাকিম সেই ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল অর্থাৎ লন্ডন আসার আগ মহুর্ত পর্যন্ত আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আজকের এই লেখা। রাত পোহালেই শুরু হত পথ চলা,ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে গ্রামের পর গ্রাম, এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়ন কোথায় যে রাত হত আর কোথায় যে খাওয়া-দাওয়া হত নিজেই জানতাম না। এর পর মনে হত মুহিবুর রহমান মানিকের সাথে আমাদেরও জীবনটা জন্মেছে শুধু মানুষের জন্য। একদিন খালারুকায় সভা শেষ করে গভীর রাত, মানিক ভাইয়ের বাসায় আসলাম। বাসায় এসে একটা চকিতে আমরা চারজন আধমরা হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। কখন যে ভোর হল টের পাইনি। হঠাৎ মানিক ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলছি, হে আল্লাহ এই মানুষটার ঘুম আর ক্লান্ত বলতে কি কিছুই নেই? হাত মুখ দুয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম। মূরগি ভুনা এর সাথে চাপাতি খেতে শুরু করলাম। হঠাৎ একজন মহিলা এসে সবাইকে নিজ হাতে তরকারী আর রুটি দিয়ে বললেন, বাবারা ভাল করে খাও, তোমাদের আবার কোথায় কখন যে খাওয়া হবে একমাত্র আল্লাহ জানেন। মাথাটা তুলে উনার মুখের দিকে থাকালাম, উনি যে আমার নেতার মা জননী চিন্তে ভূল হয় নাই। এই প্রথম মানিক ভাইয়ের মাকে দেখলাম এবং বুঝতে পারলাম মায়ের মনতো তাই খুব শক্ত করে খাওয়ানো হল। এর পর শুরু হল আবার পথচলা। সেই যে পথচলা আজও চলছে, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুহিবুর রহমান মানিকের ডিশনারিতে নেই। অভাক হয়ে যেতাম, বঙ্গবন্ধুর মত অসাধারণ স্মরণ শক্তির ক্ষমতাবান মানিক ভাই, যাকে সাথে একবার পরিচয় হত তাঁর নাম সহ উনার মেমোরিতে আজীবনের জন্য সেইভ হয়ে যায়। পরবর্তী যে কোন সময় দেখা হলেই নাম সহ বলে ফেলতেন। মানিক ভাইয়ের সাথে থেকে অনেক চেষ্টা করেছি এমন কি মুখস্ত করেও উনার মত মনে রাখতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুর মত এই অসাধারণ স্মরণ শক্তি সম্পন্ন এমন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মানিক ছাড়া আর তৃতীয় কোন ব্যাক্তি আমার জানা নেই।
যখন যে গ্রামে গিয়েছি, প্রতিটি মানুষের নাম ও চেহারা কিভাবে যে স্মরণ রাখতেন একমাত্র আল্লাহ জানেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোন নেতার এত বড় স্মরণ শক্তি আছে বলে আমার জানা নেই।১৯৯০ সালে সর্ব প্রথম বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে প্রয়াত জাতীয় নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গণতন্ত্রী পার্টি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ঢাকার সেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষ কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ ভাটি বাংলার দুই নেতাকে বরণ করে নেওয়া হয়। আমি তখন যুক্তরাজ্য যুবলীগের একজন সদস্য ও কলামিস্ট সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকাতে আমি আমার নেতার আগমনকে স্বাগত জানাই।এর পর থেকেই বার বার নির্বাচিত ছাতক দোয়ারার গণ মানুষের নেতা মুহিবুর রহমান মানিক বঙ্গবন্ধুর মত রাতদিন মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ আওয়ামীলীগ আজ যার নেতৃত্বে সু-সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ ঠিক সেই মহুর্তে তাঁর বিরুদ্ধে ৭৫ এর মিষ্টি বিতরণকারি নুরুলহুদা মুকুটের কুরুচিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে যখন সুনামগঞ্জ আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়েছিল, আমি সেদিন দেশে থাকায় আমার তখন সৌভাগ্য হয়েছিল সম্মেলনে যোগদান করা। বড় আশা করে এলাকার মানুষদের নিয়ে দলবেঁধে আনন্দঘন পরিবেশ নিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা সম্মেলনে গেলাম। সেদিন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রয়াত নেতা সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ সহ উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তাই আশা ছিল সেদিন একটা সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনব কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর দেখলাম ষ্টেইজ সহ ষ্টেইজের সামন মুকুটের লোকজনের দখলে এবং বার বার কিছু লোক পাগলের মত মিছিল সহকারে একবার আসে সামনে আর আরেকবার যায় পিছনে। এটা শক্তি প্রদর্শনের মহড়া এবং এই মহড়া দিয়ে তিনি বুঝাতে চাইছিলেন যে, তিনিই সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি। সেই সাথে নুরুলহোদা মুকুট এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, সুনামগঞ্জে তিনিই একমাত্র প্রভাবশালী ও শক্তিশালী কিন্তু নুরুলহোদা মুকুট হয়ত জানে না যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোন প্রকার শক্তি প্রদর্শন বা প্রভাবশালী দেখে দলের যোগ্যতার মাপকাঠি বিচার করেন না। সেদিন শেখ হাসিনার বিচক্ষণ দৃষ্টিকোন থেকে সুনামগঞ্জের জেলা আওয়ামীলীগের যোগ্যতার ভিত্তিতে দলের সঠিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। সম্মেলন চলা অবস্তায় বার বার নেতাদের অনুরুধ করা সত্ত্বেও মিছিল মহড়া থামে নাই। অবশেষে সৈয়দ আশরাফ এসে বললেন, আমরা এখানে নেত্রীর নির্দেশে এসেছি এবং আজকে যে কমিটি ঘোষণা করা হবে সেটাও নেত্রীর দেওয়া নির্দেশে। তাই আমি আশা করি নেত্রীর সিদ্ধান্তকে আপনারা শ্রদ্ধার সাথে মেনে নিবেন। সৈয়দ আশরাফ যখন সভাপতির নাম ঘোষণার পর সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমনের নামঘোষণা করলেন, ঠিক তখনই তারা ষ্টেইজের নেতৃবৃন্দকে চেয়ার ছুড়ে মারতে শুরু করে এবং নেত্রী ও বঙ্গবন্ধু নাম ধরে নোংরা ভা
ষায় গালাগালী শুরু করে এবং সেই সাথে সৈয়দ আশরাফের মা বাবা সহ তাঁকেও নোংরা ভাষায় গালাগালী শুরু করে। সেদিন মুহিবুর রহমান মানিক ও ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমন সহ শত শত নেতা কর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের রক্ষা করার জন্য মানব ঢাল হয়ে অনেক কষ্ট করে বেরিক্যাট দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বের করে নিয়ে আসেন। সেদিন নুরুলহুদা মুকুট শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে শুধু অমান্য করে নাই সেই সাথে শেখ হাসিনার বাবার নাম ধরে অত্যান্ত খারাপ ও নোংরা ভাষায় গালাগালী করে। সেদিন তার গুন্ডা বাহিনীর মখে বার বার উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘শেখ মুজিবের কুত্তি মুখে মার লাত্তি’। ‘আশরাফের দুই গালে জুতা মার তালে তালে’। সেদিন বলেছিলাম দুষ্টু গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল অনেক ভাল কিন্তু আজও সেই
মুকুটের চরিত্র বদলায়নি কারণ কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। আজ প্রতিদিন ছাতক দোয়ারা সহ সমস্ত সুনামগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ মুকুটের কূরুচিকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করছে। আমিও আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই।