ভারত থেকে সিলেট দিয়ে আসছে বিস্ফোরক, গন্তব্য জঙ্গিগোষ্ঠী!
সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে শক্তিশালী বিস্ফোরক। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কয়লা ও চুনাপাথর খনিতে ব্যবহৃত এসব বিস্ফোরক চোরাচালানির মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে এদেশে। পরে হাত বদল হয়ে সেগুলো চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে। সম্প্রতি বিস্ফোরকের কয়েকটি চালান আটকের পর অনুসন্ধান করে এমন তথ্য পেয়েছে র্যাব। সিলেটে আটকৃকত বিস্ফোরকের সাথে দেশের বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৯ এর উপ-অধিনায়ক মেজর জামসেদুর রহমান। সিলেটে বিস্ফোরকের সর্বশেষ চালানটি আটক হয় গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জেলার সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার সুরইঘাট থেকে। সীমান্ত এলাকা থেকে সিলেট শহরের দিকে নিয়ে আসার সময় বিপুল পরিমাণ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব। আটককৃতরা হলো- কানাইঘাট উপজেলার হালাবাদি গ্রামের ইব্রাহিম (৪০), সোনারতন গ্রামের আশিক (১৯) ও একই গ্রামের রায়হান (২০)। তাদের কাছ থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ৩০০ পিস এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ৩০০ পিস ইলেকট্রিক ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তা মেজর জামসের জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো এতোই ক্ষমতাসম্পন্ন যে, ১০টি বিস্ফোরক দিয়ে ২-৩ তলা স্থাপনা অনায়াসেই উড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এর আগে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে ৬টি এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ৬টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটরসহ কিবরিয়া আহমদ নামের এক যুবককে আটক করে র্যাব। ওই বছরের ২৪ জুলাই জৈন্তাপুরের চতুলবাজার এলাকা থেকে ৩০টি এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ইলেকট্রিক ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের ২০ মার্চ একই উপজেলার হরিপুর থেকে ১০টি বিস্ফোরকসহ ফারুক আহমদ নামের এক যুবককে আটক করে র্যাব।
জানা যায়, সিলেট বিভাগের তিনদিকই ভারতবেষ্টিত। এর মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তের ওপারে ভারতের বেশ কয়েকটি কয়লা ও চুনাপাথর খনি রয়েছে। এসব খনি থেকে কয়লা ও পাথর উত্তোলনে শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর ভাঙার পর সেগুলো উপরে তুলে আনা হয়। সূত্র জানায়, কয়লা ও পাথর খনি থেকে হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ইলেকট্রিক ডেটোনেটর চোরাই পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসে একটি চক্র। সিলেট ও সুনামগঞ্জের একাধিক চক্র এ কাজে সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্রের বিভিন্ন সদস্য র্যাবের হাতে ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায় মূলহোতারা। র্যাব-৯ এর উপ অধিনায়ক মেজর মো. জামসেদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত ৭ জানুয়ারি কানাইঘাট থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলোর সাথে দেশের বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে এসব বিস্ফোরকের গন্তব্য ছিল দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠী। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরকগুলো ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়।’ এ ধরণের বিস্ফোরক মেঘালয়ের বিভিন্ন খনিতে কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলনে ব্যবহার হয়ে থাকে বলে জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।