সিলেট:: সিলেট মাদার কেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের ভুল চিকিৎসায় দুই সন্তানের জননীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের স্বামী আজির উদ্দিন।  নিহত সুলতানা বেগমের (২৮) দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। একজনের বয়স ১৩ ও অপরজনের ৮ বছর। স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, আগের দুটি ছেলের জন্ম হয়েছিল নরমাল। তিনি তৃত্বীয় সন্তান নেয়ার প্রথম থেকেই গাইনি বিশেষজ্ঞ  ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের তত্বাধানে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। বর্তমানে তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের বয়স হয়েছিল ৬ মাস। এই অবস্থায় আজির উদ্দিন স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন ডাক্তার তৈয়বার সাথে।

এক মাস আগে ডা. তৈয়বা তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য সিলেট মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ৩ দিন থেকে ১২ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন তিনি। পরবর্তীতে গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) তার স্ত্রীর শারিরীক অবস্তার অবনতি ঘটলে ডা. তৈয়বার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি মাদায়র কেয়ার হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। ভর্তি হওয়ার পরে ডাক্তার তৈয়বা বেশ কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষার পর বলেন, গর্ভের বাচ্চা সুস্থ আছে। কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি ডাক্তার ইনজেকশন ও ওষুধ প্রদান করে সেবিকা (নার্স)-এর কাছে রোগী রেখে তিনি বাসায় চলে যান।

এর কিছুক্ষণ পর রোগীর শারিরীক অবস্থার আরো অবনতি হয়। তখন রোগীর স্বামী ও অবুঝ দুই শিশু কান্নাকাটি করে নার্স ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ডাক্তার আনার জন্য বলার অনেক্ষণ পর দায়িত্বরত নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. তৈয়বাকে ফোন করেন। ডা. তৈয়বা আসেন তারও ঘন্টাখানেক পরে। তিনি এসে রোগীর স্বামী আজির উদ্দিনকে বলেন, বাচ্চা ভেতরে নষ্ট হয়েে গেছে এবং রোগীর প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। তাই দ্রুত ১২ থেকে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। তাৎক্ষণিক রোগীর স্বামীসহ স্বজনরা ৫ ব্যাগ রক্ত প্রদান করেন। এর কিছুক্ষণ পর ডা. তৈয়বা বলেন, রোগীকে বাচাঁতে হলে ডিএনসি করতে হবে। আর তাতে প্রচুর টাকা লাগবে।

তখন রোগীর স্বামী ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুনয় করে  বলেন, আমার স্ত্রীরেক বাঁচান। প্রয়োজনে আমার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবো। পরবর্তীতে রোগীর স্বামীকে ওষুধ আনতে পাঠান ডাক্তার। ওষুধ নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তৈয়বা রোগীর স্বামীকে বলেন, বড় ধরনের একটা অপারেশন করতে হবে, আর তাতে  দুই লক্ষ টাকার মতো খরচ হবে। তখনই রোগীর স্বামী আজির উদ্দিন চিকিৎসার জন্য মতামত দেন। পরে রাত ৩ টার দিকে ডাক্তার তৈয়বা বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো না। তার বাাঁচার সম্ভাবনা ৪০ ভাগ।  তাড়াতাড়ি অন্য কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে নিতে হবে। তখন ডাক্তার তৈয়বা রক্তমাখা কাপড়ে রোগীকে নিয়ে নগরীর পার্ক ভিউ হাসপাতালে যান।

ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে স্বামী আজির উদ্দিন বলেন, পার্ক ভিউ হাসপাতালে যখন তার স্ত্রীকে নেয়া হয়, তখন পেট দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়ছিল। আর তখন তিনি পার্ক ভিউ হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে ওই ডাক্তার বলেন, গর্ভের বাচ্চা এখনও ৬ মাসের। এ সময় এত বড় অপারেশন করা বিপজ্জনক। আর আইসিইউতে আনা হয়েছে হার্টের সমস্যার জন্য। অন্য কিছুর জন্য নয়। যা ঘটার আগেই ঘটেে গেছে।  আজির উদ্দিন আরো জানান, পার্ক ভিউ হাসপাতালে যখন রোগীকে প্রেরণ করা হয়। তখন ডা. তৈয়বা চিকিৎসার কোনো কাগজ প্রদান করেননি। তিনি শুধু মাদার কেয়ার হাসপাতালের পেডে কী লিখে দিয়েছিলেন। ফলে পার্কভিউ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বার বার চিকিৎসার ফাইল খুঁজলে তা দেয়া সম্ভব হয়নি।  তাছাড়া তার স্ত্রী মৃত্যুর পর বার বার চিকিৎসার কাগজপত্র চাইলেও ডা. তৈয়বা বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা প্রদান করেননি। এ বিষয়ে জানতে ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের (জিএম’র) মোবাইল ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn