মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরুর ইসরাইল ও সৌদির গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
লেবানন ও সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে সকল ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতদের কেবল মাধ্যমে পাঠানো ফাঁস হওয়া একটি কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করেছে ইসরাইলি চ্যানেল-১০ নিউজ। বার্তা অনুযায়ী, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের পর তার সৌদি সমর্থক কর্তৃক তাকে রিয়াদে ডেকে পাঠানো এবং সৌদি আরবের বিরুদ্ধে লেবানন ‘যুদ্ধ ঘোষণা করেছে’ ঘোষণা করে বলে সৌদির এই ঘোষণার পর ইসরাইল তার সকল রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্য বার্তাটি পাঠায়। সংবাদের টীকায় বলা হয়, ‘হিব্রু ভাষায় লেখা শ্রেণিবিন্যাসকৃত দূতাবাসের বার্তাটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক প্রমাণ উপস্থাপন করে যে, সৌদি আরব ও ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বর্ধিত করতে ইচ্ছাকৃতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।’ এই খবরে সামাজিক মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনেকে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। ট্রিটা পারসি নামে একজন তার টুইটারে বলেন. ‘এটি একটি বিস্ময়কর হুমকি হিসেবে প্রমাণ দেয় যে কেমন করে সৌদি আর ইসরাইল মিলে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে ক্রমশ বাড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।’ লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হারিরির দুঃখজনক পদত্যাগের পর রবিবার ইসরাইল কেবলমাধ্যমে বিশ্বজুড়ে তার সকল দূতাবাসে বার্তা পাঠায়। চমকপ্রদ শ্রেণিন্যিাসকৃত বার্তায় বলা হয়েছে তা হয়েছে:
– হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে ইসরাইলি কূটনীতিকরা সম্ভাব্য সব কিছুই করবে।
– এতে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি যুদ্ধকে সমর্থন করতে কূটনৈতিকদের প্রাতি নির্দেশ দেয়া হয়।
– এই বার্তায় জোর দেয়া হয় যে, ইরান ‘আঞ্চলিক নাশকতা’র সঙ্গে জড়িত।
– লেবাননের রাজনীতি ও সরকার থেকে হিজবুল্লাহর সমর্থকদের বহিষ্কারের চেষ্টা চালাতে হোস্ট দেশগুলোর সরকারের ‘সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের’ কাছে আবেদন জানানোর জন্য ইসরাইলি কূটনীতিকদের আহ্বান জানানো হয়।
ইতোমধ্যেই এটা সবারই জানা যে, ইরানিয়ান প্রভাব ও সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাকের মত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টি সৌদি ও ইসরাইলের একটি সাধারণ অভিযোগ। এ কারণে ‘ঐতিহাসিক তিক্ত শত্রু’দের দমন করতে করতে সৌদি ও ইসরাইলের মধ্য নিরব সহযোগিতার একটি বাস্তবমুখী পথ তৈরি করেছে। এই অঞ্চলে সৌদি ও ইসরাইল তাদের প্রাথমিক নীতির লক্ষ্য উভয়ই রাষ্ট্রই তথাকথিত ‘শিয়া ক্রিসেন্ট’ বিভক্তের নীতি গ্রহণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরাইলের দীর্ঘকালের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে হিজবুল্লাহ; যেটিকে ইসরাইলি নেতারা ইহুদি রাষ্ট্রের উত্তর সীমান্তের বিরুদ্ধে ইরানের আঞ্চলিক উপস্থিতিকে সম্প্রসারণ হিসাবে দেখছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ডকুমেন্টটি ‘চ্যানেল-১০ নিউজ’ এর সিনিয়র কূটনৈতিক প্রতিবেদক বারাক রাবিদ কর্তৃক হস্তগত হয়।
রাবিদ তার টুইটার পেজে লিখেন …
• সৌদির পক্ষে এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে ইসরাইলি কূটনীতিকদের কাছে পাঠানো একটি কেবল বার্তা আমি পেয়েছি; যা চ্যানেল-১০ এ প্রকাশ করা হয়েছে। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত বার্তাটিতে হরিরির পদত্যাগে সৌদি আরবের পক্ষে অবস্থান নিতে সকল ইসরাইলি দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
• লেবাননের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হোস্ট সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাতে ইসরাইলি কূটনীতিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল – যা খুবই একটি বিরল পদক্ষেপ।
• বার্তায় বলা হয়: ‘হরিরির পদত্যাগের বিষয়টি আপনাদের জোর দিয়ে দেখাতে হবে যে, ইরান এবং হিজবুল্লাহ লেবাননের নিরাপত্তা জন্য কতটা বিপজ্জনক।
• বার্তায় ইয়েমেনের হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদির যুদ্ধে দেশটিকে সমর্থন করার জন্য ইসরাইলি কূটনীতিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এতে রিয়াদের দিকে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ঘটনায় ইরান ও হিজবুল্লাহর উপর অধিকতর চাপ প্রয়োগের জন্য জোর দিতে বলা হয়েছে। এই রির্পোটের ভিত্তিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ‘জিরোহেজেজে’র খবরে বলা হয়, ইরান ও শিয়া বিরোধী জোটের আবির্ভাব ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিজেদের সুবিধার জন্য ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্য গড়ে ওঠা এই জোট আরেকটি ইসরাইলি-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ক্রস হেয়ারের মধ্য লেবাননকে রাখা হয়েছে। ইয়েমেনের যুদ্ধও তীব্রতাও ধাপে ধাপে অব্যাহত থাকবে – সম্ভবত এখন ইসরাইলের রাজনৈতিক সমর্থনও ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাবে। সূত্র: জিরোহেজেজ