তন্দ্রা রয় –

রাস্তায় প্রায়ই কিছু লোকের গালে কষে চড় মারতে মন চায়। আমি জানি আরো অনেকেরই মন চায়…দেয়ও কেউ কেউ…বাস্তবে যারা দিতে পারে না মনে মনে হলেও একবার দেয়…আমি বহু চিন্তা করেও এই সব বিকৃত মন মানসিকতার লোকদের বিকৃত সুখের কারণটা খুঁজে পাইনি…আপনারা জানেন কি কেউ?

ছোট মফস্বলের মেয়ে আমি…ঢাকায় স্থায়ীভাবে বাস করার পর বুঝলাম এতোদিন আসলে মায়ের পেটেই ছিলাম….. বিচিত্র সব কাজকাম হয় এই শহরে…জটিল সব অভিজ্ঞতা…মার অফিসে যাতায়াতের জন্য বাসই প্রধান ভরসা…প্রতিদিনই সকালে যাওয়া আর অফিস ছুটির পর প্রচন্ড ভীড় হয় এসব বাসগুলোতে…নারী- পুরুষ সবাইকে প্রায় যুদ্ধ জয়ের মত করেই লড়াই করে উঠতে হয় বাসে। অনিচ্ছায় কারও কারও সাথে ধাক্কা লাগে…কিন্তু কিছু লোক খুব সচেতনভাবে ঐ সময়টাকে কাজে লাগায় তাদের বিকৃত মনের ক্ষুদা মেটাতে। নানা বয়সী মহিলাদের শরীরের নানান জায়গায় হাত দিয়ে…খোঁচা…চিমটি মেরে…যেসব মহিলারা সিটে বসে যান তাদেরও স্বস্তি নেই,এমন ভাবে এসব পুরুষ দাঁড়ায় যেন তার বিশেষ অঙ্গটা মেয়েটার শরীর স্পর্শ করে। বাসের সামনের দিকে মহিলা আসনগুলো থাকে…পেছনে ফাঁকা থাকলেও এখানেই মেয়েদের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে মেয়েদের শরীরে শরীর লেপ্টে…সরে দাঁড়াতে বলবেন? উত্তর তৈরি… পাবলিক বাসে উঠলে ধাক্কা খেতে হবে,,,সমস্যা হলে নিজে গাড়ি কিনে চলাফেরা করেন…এদের সমর্থনেও কেউ কেউ এগিয়ে আসে। সেদিন দেখলাম অল্প বয়সী একটা মেয়ে ছাতা দিয়ে এক মাঝ বয়সী লোককে পেটাচ্ছে…দেখে ভালো লাগলো যাক মেয়েরা প্রতিবাদ করতে শিখছে। লোকটির অশ্লীল গালি আর মেয়েটার ছাতার বাড়ি সমান তালে চলছে…সাবাশ কন্যা……..।

ইদানিং একটা কথা প্রায়ই শুনি মেয়েদের পোশাক নাকি তাদের যৌন হয়রানির উল্লেখযোগ্য কারণ। তাদের জন্য একটা ঘটনা বলি, বেশ কিছুদিন আগে বোরকা পড়া চার পাঁচটা মেয়ে আমার সাথে একই বাসে উঠলো,একসাথে যাওয়া আসার কারণে কিছুটা পরিচিত, আমি বসতে পারলেও মেয়েগুলো দাঁড়িয়েছিলো। কোন ফাঁকে এক মাঝ বয়সী লোক এই মেয়েদের মাঝে ঢুকে পড়লেন এবং কোনো সংকোচ ছাড়াই মেয়েদের শরীরর নানা জায়গায় বোরকার উপর দিয়েই হাত চালাচ্ছিলেন। গালে কাঁচা-পাঁকা দাড়ি পোশাকে ভদ্র এই লোকটাকে পরে হেলপার ডেকে বাস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামানো হয়েছিলো। পর্দা করেও এই নিরীহ কন্যারা এ রাক্ষসদের চোখ থেকে কুৎসিত পর্দাটা সরাতে পারেনি। তাই বলি মনের উপর বিবেকের উপর যে কালো পর্দা পড়েছে তা না সরালে…কোন পর্দা করেই কেউ নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। গণসচেতনতাই এর একমাত্র প্রতিষেধক………..।

এসবই আমাদের সবারই জানা ঘটনা। শোনা গল্প…কিন্তু আমরা যারা প্রতিদিনই এসব জঘন্য লোকদের মুখোমুখি হই…কেবল তারাই জানি এটা কত অপমানে…কতটা কষ্টের। গাঁ ঘিনঘিন করে…….কত মেয়েকে আমি কাঁদতে দেখেছি…..নিজেও কি কোনোদিন কাঁদিনি?? কেঁদেছি…..লজ্জায়…..অপমানে।

মানুষ আশায় বাঁচে…….আমি যেহেতু মানুষ তাই আশায় আছি…..কোনো একদিন এই সব অমানুষদের বিবেক নাড়াচাড়া দিয়ে উঠবে….এসব কুৎসিত কাজ করার আগে তারা অন্তত একবার ভাববে…তার মা-বোন-স্ত্রী- কন্যা-আপনজনেরাও বাসে উঠে ভীড়ে যায়…কেমন লাগবে যদি তাদের সাথে এমন হয়????? সুদিনের প্রতিক্ষায়…..

লেখক: তন্দ্রা রয়

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn