মন্তব্য প্রতিবেদনঃ ইমন-জগলুলের বাহাস, কি ভাবছেন নেতাকর্মী?
ইমানুজ্জামান মহীঃ
গতকাল ২৫শে নবেম্বর জেলা প্রশাসক আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি অনুষ্টানমঞ্চে আওয়ামীলীগের পৌর-কমিটির বৈধতা অবৈধতা নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার এম এনামূল কবীর ইমনের সাথে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল । বাকবিতন্ডায় উওপ্ত হয়ে উঠে সভামঞ্চের পরিবেশ। জেলা প্রশাসক সহ অনেকে তাদেরকে নিভৃত করেন। সভামঞ্চে তারা দু’জন নিভৃত হলেও নিভৃত হয়নি তাদের কর্মী সমর্থকদের আলোচনা সমালোচনা । কাল সারাদিন এই দু’নেতার মুখোমুখি অবস্থানের বিষয় ছিল ‘টক অফ দ্যা টাউন’। অনুষ্টানের সকল কিছুকে ছাড়িয়ে একই কথা চলতে থাকে সবার মুখেমুখে। চায়ের দোকানে ,খাওয়ার টেবিলে, সড়কের মোড়ে কিংবা রাজনৈতিক আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসতে থাকে এই একই প্রসঙ্গ।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান ও সম্পাদক ব্যারিষ্টার ইমনের মধ্যে বিড়াজিত তিক্ত সম্পর্কের অবসান ও সাম্প্রতিক কালে তাদের মাঝে গড়ে ঊঠা সুসম্পর্ক মেয়র জগলুলকে অনেকটা রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে। বলা যায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। রাজনীতির জন্য এটা তার একটা মায়নাস পয়েন্ট। জগলুল তার ঘনিষ্টজনদের নিয়ে সৃষ্ট পৌর আওয়ামীলীগের ফ্লাটফর্ম থেকে গত এক বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের প্যারালাল যে রাজনীতির ধারা সৃষ্টি করেছিলেন তার হয়তো অবসান হতে পারে। পৌর কমিটির একাংশ যা তার গ্রুপ রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি তা ভেঙ্গে গেলে মতিউর-ইমনের সাথে রাজনৈতিক ভাবে মুখাবেলা তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
বিগত জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত এডভোকেট মলয় চক্রবর্তী রাজুর সভাপতিত্বে পৌর আওয়ামীলীগের কমিটি ছিল একমাত্র কমিটি। দলের কাউন্সিলের পূর্ব মূহূর্তে জগলুল তার ঘনিষ্ট জন নিয়ে পৃথক পৌর কমিটি ঘোষনা দেন। দলের তখনকার দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে তার সুস্পর্ক থাকায় তারা এর প্রতিবাদ করেননি। পরবর্তীতে জগলুলের সাথে দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুটের ঈমানি ঐক্য স্থাপিত হলে জগলুল বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্টানে তথাকথিত পৌর কমি্টিকে কাজে লাগান। পৌর কমিটির ব্যানারে নিজের পৃষ্টপোষকতায় তিনি ব্যারিষ্টার ইমনের আয়োজিত সভার বিরুদ্ধে সময় সময় পাল্টা সভা করতেন। সেই সভায় হয় তিনি নিজে প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা না হয় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত হতেন। মূলত; তিনিই ছিলেন এই কমিটির অভিবাবক, উপদেষ্টা। তার নিয়ন্ত্রনে, তার কথাই চলতো কমিটি।
২৫ নবেম্ভর বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি অনুষ্টানে পাল্টাপাল্টি এই দুই পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে মঞ্চে আহ্বান করা না করা নিয়েই জগলুল-ইমনের ঝগড়ার শুরু। ইমন জগলুলের পৌর কমিটিকে অবৈধ বললে জগলুল ইমনের জেলা কমিটিকে অস্বীকার করেন। জগলুলের যুক্তি ও ভাষ্য হচ্ছে কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে যেহেতু এলাকার নেতাকর্মীকে জেলা কমিটির ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি তাই এই সভাপতি- সম্পাদক তিনি মানতে নারাজ। ইমন তার কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, What a Audacity you have— উপস্থিত অনেকেই এমনকি মেয়র সহ অনেকেই তার ইংরাজীতে বলা এই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছেন কি না বুঝা যায়নি। পরবর্তীতে তার বলা এই কথা গুলোকে নানাজন নানাভাবে ব্যাখ্যা করে মেয়রকে নানা কথা বুঝাতে থাকেন।
মেয়র জগলুল তার সমর্থিত পৌর কমিটির বৈধতার ব্যাপারে বলেন, তথকালীন জেলা সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুটের অনুমোদিত তার এই পৌরকমিটি। পৌর কমিটি নিয়ে ইমন-জগলুলের বাহাসের সময় মতিউর রহমান ও নূরুল হুদা মুকুট দু’জনই সভামঞ্চে পাশে বসা। ইমনের কথার প্রতিবাদ তারা কেউ করেননি। প্রতিবাদ না করায় অনেকেই ভাবছেন জগলুল তার সমর্থিত কমিটির ব্যাপারে যা বলছেন তা সঠিক নয়। নেতাকর্মীরা তাই দাবী করছেন এই মতবিরোধের অবসান হওয়া দরকার। তারা আশা করেন জেলা সভাপতি ও সম্পাদক যৌথ বিবৃতি দিয়ে পাল্টাপাল্টি পৌর-কমিটির ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। অনাকাঙ্গিত এ ঘটনার পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতাদের স্বীদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।