মসজিদের ইমাম কোয়ার্টার থেকে লক্ষাধিক টাকা চুরি
আল-হেলাল :-মসজিদের ইমাম কোয়ার্টার থেকে লাগেজের তালা খুলে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়েছে অজ্ঞাত চোর। গত ১৫ জুন মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে বাদ এশা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব সুলতানপুর জামে মসজিদের ইমাম কোর্য়ার্টারে এই ঘটনাটি ঘটে। ৪ বছর আগে রাতে মসজিদের গ্রীল ভেঙ্গে দান বাক্সের টাকা ও সিকি আধলি পয়সা চুরি হয় একই মসজিদে থেকে। জানতে চাইলে মসজিদের ইমাম হাফিজ আল আমিন (২৫) জানান,গত এক বছরের বেতনের টাকা,পবিত্র ঈদুল ফিতরের বোনাসের টাকা,তারাবিহ নামাজের ও পৌরসভা থেকে পাওয়া আর্থিক সম্মানী এবং আল কোরআন পড়ানোর টিউশন ফি এর জমানো ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা আমি সরল বিশ্বাসে আমার রুমের নিজ লাগেজে তালা মেরে রাখি।
ঘটনার আগে ও পরে ৩ দিন আর এই টাকাতে হাত দেইনি। ১৬ জুন বুধবার দুপুরে টাকা খুজতে গিয়ে দেখি শুধু লাগেজের চাবি আছে কিন্তু তালা নেই ও লাগেজের ভেতরে থাকা আমার টাকাগুলোও নেই। পরে তাৎক্ষনিকভাবে আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ি। কে করলো আমার এই ডাকাতি। আমি এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছি ঘটনার ৩ দিন পরও স্বাভাবিক হতে পারিনি। ১৮ জুন শুক্রবার বাদ জুমআ ঘটনাটি তিনি খুলে বলেন মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় মুসল্লিয়ানদের কাছে। এর আগে মহল্লার লোকজন ঘটনাটি জেনেছেন। কিন্তু মসজিদ কমিটি তাকে অনুমতি না দেয়ায় তিনি ঘটনার ব্যাপারে থানায় মামলা বা জিডি দায়ের করতে পারেননি এখনও। মসজিদ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ উল্টো ইমাম সাহেবকে এত টাকা কোথায় পেলেন বলে জানতে চান কমিটির সভায়। ইমাম সাহেব তিলতিল পরিশ্রম করে তার জমানো টাকার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিলেও থানায় জিডি বা মামলা দায়েরের অনুমতি পাননি এখনও।
ইমাম হাফিজ আল আমিন বলেন,ইমাম কোয়ার্টারে মহল্লার দুজন রাজমিস্ত্রী যথাক্রমে আবুল লেইছ ও ফজুল হক গর্ত ভরাট কাজ করেছেন। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হলে কোন কোন মুসল্লিয়ানরা তাদেরকে ঢেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তারা কেউই আমার টাকা নেয়ার ব্যাপারে স্বীকার করেননি। পূর্ব সুলতানপুরের স্থায়ী বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী আবুল লেইছ ও ফজুল হক বলেন,আমরা মাত্র ১ ঘন্টা ইমাম সাহেবের রুমে বাকী সময় পাশের কোয়ার্টারে কাজ করেছি। আমরা ইমাম সাহেবের টাকা দেখিনি। চুরি করার প্রশ্নই আসেনা। তারপরও আমরা মসজিদে বসে কসম করেছি আমরা টাকা নেইনি। ইমাম সাহেব আসলে বলতেই পারছেননা তার টাকাগুলো আমাদের কাজের সময়ে,অথবা আগে না আমাদের কাজের পরে চুরি হয়েছে। আজ আমাদেরকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দেয়া হচ্ছে। আমাদের মনে হয় ৪ বছর আগে যে চোর দানবাক্সের টাকা চুরি করেছে সেই একই চোর ইমাম সাহেবের টাকা চুরি করেছে। অথবা মসজিদের নিকটস্থ কোন সুযোগ সন্ধানী এই চুরির সাথে জড়িত থাকতে পারে।
পূর্ব সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন,আবুল লেইছ ও ফজুল হক আমাদের মহল্লার দুটি সৎ নিরীহ ও পরিশ্রমি ছেলে। এরা কাজ করে খায়। তাদের বিরুদ্ধে কোনদিন চুরির অপবাদ শুনিনি। তাছাড়া এরা দুই মাস আমার বিল্ডিং এর কাজ করেছে ঘুনাক্ষরেও আমার কোন টাকা পয়সাতে হাত দেয়নি। পূর্ব সুলতানপুর নিবাসী সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল বলেন,আমাদের মহল্লায় কিছু চিহ্নিত পকেটমার,গরু চোর,বখাটে,জুয়ারি,নেশাখোর রয়েছে হতে পারে এটি তাদের কাজ। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহবাণ জানান তিনি। আল-হেলাল বলেন,কমিটি অনুমতি না দিলেও ইমাম সাহেবের পক্ষে আমি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করে ইমাম সাহেবের টাকাগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা করবো।
উল্লেখ্য নেত্রকোনা জেলার পূর্বদলা থানার জারিয়া ডাকঘরের ঘুমকান্দা গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র ইমাম হাফিজ আল আমিন। তিনি গত ৭ বছর ধরে পূর্ব সুলতানপুর জামে মসজিদে অত্যন্ত সততার সাথে ইমামতি করে যাচ্ছেন। চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা কামনা করেছেন। পাশাপাশি তাকে সহায়তা প্রদানের জন্য সমাজের বিত্তবান লোকজনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।