মহসিন ভাইয়ের দরজা ছিল সবার জন্য খোলা: সুলতান মনসুর
এম. এ. কাইয়ুম, মৌলভীবাজার-
১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বৃহত্তর সিলেট সফরে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় মৌলভীবাজারের মূল সড়কে তার সৌজন্যে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ নাসিরের পরামর্শে একটি তোরণ নির্মাণ করেন সৈয়দ মহসিন আলী। যা নজর কাড়ে বঙ্গুবন্ধুর। তাইতো তোরণের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির গ্লাস নামিয়ে তাকে কাছে টেনে নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বলেছিলেন, তুমি কাজ করে যাও। এই শুরু মহসিন আলীর। এরপর আর রাজনীতিতে পেছনে তাকাতে হয়নি সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রীর। সৈয়দ মহসীন আলী সম্পর্কে এমনটাই জানালেন তার রাজনৈতিক সহকর্মী আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মো. মনসুর আহমেদ।
প্রসঙ্গত, সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর কলকাতার আলীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ আশরাফ আলী। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। আর মায়ের নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি কলকাতা চলে যান। আর সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মহসিন আলী।
জানা যায়, সৈয়দ মহসিন আলীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্টজেবিয়ার্স স্কুলে জুনিয়র কেম্ব্রিজ ও সিনিয়র কেম্ব্রিজ পাস করেন। পরবর্তীকালে আবার বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। তবে আবারও তিনি কলকাতা থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেন।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের কারণে স্বতস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধচলাকালে গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন মহসিন আলী। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিশেষ করে আলোচিত ‘শেরপুর যুদ্ধে’ তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল বলে জানান সুলতান মনসুর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুলতান মনসুর আহমদ মোবাইফোনে আলাপে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওই আহ্বানের পর থেকেই মহসিন ভাই রাজনীততে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র জননেতা যিনি পৌরসভায় পরপর তিনবার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাকে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।
সুলতান মনসুর আরও বলেন, কলকাতার স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও তিনি বাংলা আর হিন্দি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ব্যক্তি মহসিন আলী সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, তার মতো তাহখোলা ও উদার মনের মানুষ দ্বিতীয় কাউকে আমি দেখিনি। নিজের কাছে একশো টাকা থাকলেও অন্যের প্রয়োজনে দুইশো টাকা খরচ করতেন মহসিন ভাই!
পৌর মেয়র থাকাবস্থায় তার দরজা ছিল সবার জন্য খোলা, বিশে করে গরিব মানুষের জন্য যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো সময় যেকোনো দলের মানুষ তাকে কাছে পেত। মন্ত্রী হওয়ার পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল। বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, ব্যাপক সাংস্কৃতিক মনা মানুষ ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার আসছেন কিন্তু তার বাসায় যাননি এমনটা মনে হয় নেই।কেউ এলেই তাদের নিয়ে বাগানে তচলে যেতেন সাংস্কৃতিক মনা এই মানুষটি। সেখানে গানের আসর বসাতেন। নিজেও গান গাইতেন। সৈয়দ মহসিন আলী মানুষের নেতা ছিলেন বলেও দাবি করেন সুলতান মনসুর। দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও তাকে দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি বলেও দাবি করেন তিনি।আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আমার রাজনীতিতে সৈয়দ মহসিন আলীর অনেক সহযোগিতা ছিল। একইভাবে তার রাজনীতিতেও আমার সহযোগিতা ছিল। সমাজকল্যানমন্ত্রীর সঙ্গে সবশেষ সাক্ষাৎ কখন হয়েছিল এমন প্রশ্নে উত্তরে সুলতান মনসুর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন ফেব্রুয়ারিতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাত হয়। কিন্তু আমি কি জানতাম এটাই শেষ দেখা হবে!