মাঠে আন্দোলনের নির্দেশ বিএনপির
সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সারাদেশে স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার নির্দেশনা পৌছানো হয়েছে তৃণমূলে। ৮ই ফেব্রুয়ারি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় নেতিবাচক হলে নিজেদের মতো করে কড়া প্রতিবাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল। দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশের কর্মী-সমর্থকরা উদ্বিগ্ন। সবার মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। হবে। কেন্দ্র বা নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই, যার যার অবস্থান থেকেই রাজপথে নামতে হবে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হওয়ার পর জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দুই দফা। আইনজীবীদের সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তিনি। সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করতে মঙ্গলবার ডাকা হয়েছে কূটনীতিকদের।
রোববার দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ও রায়কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের ধরনসহ নানা বিষয়ে তৃণমূলের মতামত নেন এবং তৃণমূলকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। কেন্দ্রের সে বার্তা নিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলায় জেলায়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও সফর করেছেন বেশকিছু জেলায়। নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশের কর্মী-সমর্থকরা উদ্বিগ্ন। সবার মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। দলের কর্মী-সমর্থকদের সেন্টিমেন্ট এখন তুঙ্গে। অন্যদিকে কেন্দ্রের তরফে তৃণমূলে প্রাথমিক বার্তা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় কেবল তার বিরুদ্ধে রায় হিসেবে বিবেচনা করলে হবে না। এটা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রায় হবে। তেমন রায়কে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে।
তবে বিএনপির তরফে স্বেচ্ছা কারাবরণসহ কড়া প্রতিবাদ জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কৌশলগত কারণে কেন্দ্র থেকে কড়া কর্মসূচি দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেজন্য স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তৃণমূলে। সেই সঙ্গে রায়কে কেন্দ্র করে আগামী নির্বাচন, দলের নেতৃত্ব নিয়ে সম্ভাব্য জটিলতা নিরসন, গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন, রাজপথের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ডাকা হয়েছে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা। এদিকে গতকাল ঢাকা মহানগর বিএনপির এক সাংগঠনিক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আজকে আমাদের লক্ষ্য হবে জনগণের সুনামি সৃষ্টি করা। জনগণকে সেই স্রোতের মতো নিয়ে আসতে আমাদের কাজ করতে হবে।
সম্ভাব্য আন্দোলনের বার্তা নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতীক হলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকার তার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে কোনো রায় দিলে দেশের মানুষ সেটা মানবে না। এটা সাধারণ কোনো প্রতিবাদের বিষয় নয়। তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের কর্মসূচি বা নেতাদের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে থাকবে না। যে নেতা সে অপেক্ষায় থাকবেন, তিনি তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের কাছে সরকারের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ফলে রায়কে কেন্দ্র করে মানুষের বিস্ফোরণোন্মুখ আবেগের সঙ্গেই নেতাদের থাকতে হবে।
নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমি ৯টি জেলা ঘুরে এসেছি। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সেন্টিমেন্ট দেখে এসেছি। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে কোনো সাজা দেয়া হলে রাজপথেই তার মোকাবিলা করা হবে। সারা দেশের নেতাকর্মীরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে নামবে, সরকার কঠোর হলে দেশের মানুষ কঠোরতর হবে। নেতারা এবার স্বেচ্ছায় কারাবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে, স্বাভাবিকভাবে কর্মীরা আর ঘরে বসে থাকবে না।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হলে সেটা হবে ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সরকারের একটি পদক্ষেপ। তাই আমরা কোনো অন্যায় রায় মেনে নেব না। মিলন বলেন, এবার কেন্দ্রের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকবে না। কেন্দ্রও এবার তৃণমূলের মতামতের বাইরে যাবে না। জনসম্পৃক্ততা ও কঠোরতার দিক থেকে এবারের প্রতিবাদ অতীতের যেকোনো প্রতিবাদকে ছাড়িয়ে যাবে। ব্যাপক সংখ্যক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাজপথে থাকবো। রাজপথেই ফয়সালা হবে। রাজপথের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে এবং সরকার পতনের মাধ্যমে তার সমাপ্তি হবে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৮ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। সারা দেশে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষও এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বাইরে নয়। তিনি বলেন, ৮ই ফেব্রুয়ারির রায় প্রতিকূলে গেলে বিএনপি কিভাবে মোকাবিলা করবে, আগামীদিনের পথচলা কেমন হবে তা চূড়ান্ত করতেই তো ৩রা ফেব্রুয়ারি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে। তবে এটা নিশ্চিত মামলায় খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হলে তা রাজপথেই মোকাবিলা করা হবে।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলে কর্মী-সমর্থকসহ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বসে থাকবে না। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আমরা জেলার থানা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। স্বেচ্ছা কারাবরণের ঘোষণা দিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তৃণমূলের মতামত জানিয়েছি। খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিলে আমরা কারো কোনো কর্মসূচি বা নির্দেশনার জন্য তাকিয়ে থাকবো না। ২০-২৫ হাজার লোক একসঙ্গেই রাজপথে নামবো।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান বলেন, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান খালেদা জিয়া। সরকার আদালতকে ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলায় যেনতেন রায় দিয়ে দেবে আর আমরা সেটা মেনে নেবো তা হবে না। আমরা অন্যায়কে সহজে মেনে নেবো না। অন্যায় কোনো রায় দেয়া হলে আমরা রাজনৈতিকভাবে কঠোরপন্থায় তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। সোজা কথায়, যে ভাষায় সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রয়োজন সে ভাষায় প্রতিবাদের জন্য ঢাকাবাসী প্রস্তুত হয়ে আছে। সরকারকে এবার বুঝিয়ে দেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাবেন। যদি তার ব্যত্যয় হয় তবে বিরোধী নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা সর্বাত্মকভাবে রাজপথে থেকে প্রতিবাদ করবো। আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয় জুলুম নেমে এলে রাজপথে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা হবে আমাদের অস্তিত্বের লড়াই, এ লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির নিষ্ক্রিয় বা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই।