শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, মাদরাসা জঙ্গিবাদের কারখানা-এটি সঠিক নয়। আপনারা এই কথা মো্টেও বলবেন না। কারণ গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িতদের কেউ মাদ্রাসার ছাত্র ছিল না। তারা উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত ছিল। রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) অডিটরিয়ামে শুক্রবার (২৪ মার্চ) ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘ফাজিল অনার্স শিক্ষার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি মন্তব্য করেন।

গুলশান-শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মানুষ মারলেই বেহেস্তে যাওয়া যাবে, হুরপরি পাওয়া যাবে বলে যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে এবং কুমন্ত্রনা দিয়েছে এখন তারা নিজেরাই প্রাণভিক্ষা চাচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় কিংবা বিপথগামী না হয় সেজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সমাজের সবাইকে সচেতন থাকারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষা অর্জনও প্রয়োজন। এর ফলে আলেমরা শুধু আলেমের মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকবে না। তারা সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বিসিএস ক্যাডার হয়ে উঠবে। তারাও দেশ পরিচালনায় শরিক হবে। এ জন্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সেই উপযোগী করে তৈরি করার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।

মাদরাসায় প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামের ব্যাখ্যা ও বাস্তব জীবন ব্যবস্থার জন্য উচ্চশিক্ষার দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদরাসায় প্রকৃত ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞানও অর্জন করতে হবে। তার জন্যে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞান ও গবেষণা বাড়াতে হবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য সুন্দর ও চমৎকার শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আলেম উলামারা সেই বৃটিশ আমল থেকে প্রায় একশ’ বছর ধরে আলাদা আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করে আসছিলেন। এজন্য তারা লংমার্চ পর্যন্তও করেছিলেন। কিন্তু তাদের এ দাবি পূরণ করেনি কোনো সরকার। আলেম উলামাদের এ দাবি পূরণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

তিনি জানান, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় চালুর শুরুতে ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স ছিল। বর্তমানে তা ৫২টিতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৫৩টি আলিম এবং ২২১টি ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসায় উচ্চমানের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধিকে আরও বাড়াতে ৪৮৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। যা একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি সারা দেশে ১ হাজার ৩৩২টি নতুন প্রতিষ্ঠানে মা্দ্রাসায় ভবন করা হয়েছে জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আরও ১৮শ’ মাদ্রাসায় ভবন তৈরি করার পরিকল্পা নেওয়া হয়েছে। যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গোডাউনের মতো না থাকে। মাদ্রাসার শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়াও বর্তমান সরকার মাদসারা শিক্ষার উন্নয়নে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মডেল মাদরাসা হিসেবে রূপান্তরিত করেছে। নামি-দামি স্কুলগুলোর মতোই, এগুলোতে ল্যাব, লাইববেরসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে ফলাফলও ভাল হয়েছে নতুন করে মডেল মাদ্রাসা তৈরি প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, যে সরকার নিজেরা ইসলামী সরকার, সৎলোকের সরকার দাবি করেছিল। তাদের আমলে কোনো মাদরাসা ভবন হয়নি।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশে ইসলাম থাকবে না, ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। বরং এই সরকারের আমলে মাদ্রাসা ও মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে। যেসব শিক্ষক এই অপপ্রচার করেছেন তাদের ইমান দূর্বল, শুধু তাই নয় এরা ধান্দাবাজ।

আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক অধ্যাপক মো. ইলিয়াছ সিদ্দিকী, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষরা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn