মানুষ মূলত একা, মাঝে কত আয়োজন!
তখন একবার বন্ধুরা মিলে পিকনিকে যাবার সিদ্ধান্ত হলো। মান্নানভাই’র দোকান থেকে মাংস কেনা হলো। কিন্তু রান্নার জন্যে এতোবড় হাঁড়ি কোথায় পাবো? পরদিন খুব সকালে বড় হাঁড়ি নিয়ে মান্নানভাই এসে হাজির! আরেকবার, যখন ২০০০ সালে বাড়ি কিনি তখনকার কথা। নতুন ডুপ্লেক্স এই বাড়িটিতে উঠবার আগেই আমরা নিজেদের মতো করে পছন্দসই ঝাড়বাতি, ইলেকট্রিক ক্যান্ডেল লাইট, হলওয়ে লাইট লাগানোসহ ডেকোরেশনের বেশ কিছু কাজ করাতে চাইলাম। কিন্তু তেমন লোক কোথায় পাবো? মান্নান ভাইকে জানাতেই উনি এ কাজে পারদর্শী লোক ঠিক করে দিলেন। আমরা বাড়িময় সমস্ত কাজ সুচারুরূপে করিয়ে নিলাম। কৃতজ্ঞতায় নত হলাম এই প্রবাসে এমন একজন অভিভাবকের ন্যায় মানুষের প্রতি।
আজও বসন্তের ঝলমলে আরেকটি দিন। আজ মান্নানভাই আমাদের ছেড়ে গেছেন পৃথিবীর সব মায়া, ভালোবাসা পিছনে ফেলে। সকালে ছেলেদের স্কুলে পাঠিয়ে বিক্ষিপ্ত মনে গাড়ি নিয়ে বের হই, গন্তব্যহীন কোন পথের দিকে। জ্যাকসন হাইট্স সেভেনটি থ্রি স্ট্রিটে গাড়ি পার্ক করে বসে থাকি অর্থহীন। এখানে ওখানে কিছু মানুষের জটলা। হয়তো তাঁরা সকলেই শোকে পাথর। হয়তোবা নিজেদের মাঝে তীব্র মনখারাপ নিয়ে আলোচনা করছেন, মান্নানভাই কতোটা ভালো মানুষ ছিলেন, এ নিয়ে… সময়ের স্রোতে খুব কাছের প্রিয় মানুষগুলো, তাদের নিয়ে মুগ্ধস্মৃতিগুলো ক্রমশ অস্পষ্ট হতে হতে দূরের কোন উড়ে যাওয়া পাখির মতো মিলিয়ে যাবে হয়তো একদিন। শুধু কখনো কখনো বুকের গহীন থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ভেসে বেড়াবে। আমরা মানুষ এসেছি মূলত একা। মাঝে কত আয়োজন! আবার গহীন অন্ধকারে ফিরেও যাবো একা। শুধু পৃথিবীর বুকে একটুকরো আলোর মতন থেকে যাবে আমাদের সকল কৃতকাজ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন সকলে। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)