মির্জা ফখরুলের শূন্য আসনে মান্নাকে চায় বিএনপি!
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের (বগুড়া-৬) শূন্য আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এ সপ্তাহের শুরুতে দলের হাইকমান্ড থেকে তার কাছে এই প্রস্তাব যায়। প্রস্তাবের ক্ষেত্রে আকারে-ইঙ্গিতে মান্নাকে দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে শর্ত হিসেবে দেখানোর চেষ্টাও করেছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ৬ জন জয়ী হন। বিএনপি ও নাগরিক ঐক্যের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই ছয়জনের মধ্যে মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকিদের নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত মানা-না মানা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। শপথগ্রহণ নিয়ে দলের অনুমতি থাকলেও সংসদে থাকা ৫ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে দলের হাইকমান্ডে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি আছে। বিশেষ করে আগামী দিনে দলকে যেন ওই ৫ সংসদ সদস্য বিভ্রান্ত করতে না পারেন, সেদিক বিবেচনা করে প্রভাবশালী কোনও নেতাকেই বেছে নিতে চায় বিএনপি হাইকমান্ড। আর এ বিবেচনায় প্রথমেই মাহমুদুর রহমান মান্নাকে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরআগে, মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল বগুড়া-৬ আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর ৮ মে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৪ জুন এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে বগুড়া উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দলের হাইকমান্ড থেকে মান্নার কাছে প্রস্তাব যায়। প্রস্তাবের ক্ষেত্রে আকারে-ইঙ্গিতে মান্নাকে দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে শর্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মান্না বিএনপিতে যোগ দিলে তাকে বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে লড়েছেন মান্না। নাগরিক ঐক্যের নির্ভরযোগ্য একাধিক নেতা জানান, সরাসরি মান্নাকে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব না দিলেও আকারে-ইঙ্গিতে বোঝানো হয়েছে। তবে এতে তিনি গা করেননি। নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে আগ্রহের কথা বলা হয়েছে। তবে দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে নাগরিক ঐক্য ‘আলোচনার বিষয়’ বলেই মনে করে না। একইসঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, এর গ্যারান্টিও চেয়েছেন মান্না। সেক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোনও জবাব পায়নি নাগরিক ঐক্য। মাহমুদুর রহমান মান্নার ঘনিষ্ঠ একনেতা বলছেন, ‘বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রস্তাব দিয়েছে, এটা তো সম্মানের। কিন্তু জাতীয় ঐক্যেফ্রন্টের বাকি শরিকদের মধ্যে, বিশেষ করে আ স ম আবদুর রব, কাদের সিদ্দিকীর অভিমত জানাও প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো পরিষ্কার না হলে মান্নার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।’
নাগরিক ঐক্যের একাধিক শীর্ষ নেতা মনে করছেন, বিএনপিতে যোগ দিতে বলায় বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে মান্নার অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ওটা থেমে গেছে।’ বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রার্থী না হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী তিনজনের নাম আলোচনায় আছে। এর মধ্যে কোনও কোনও নেতা নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রকে। তবে বিএনপির হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে মূলত ‘রাজনীতি’কে কেন্দ্র করে। সংসদে যাওয়া ৫ জনকে নিয়ন্ত্রণ করা, দলের নির্দেশনা মেনে চলার মতো বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে তিনজনের নাম আলোচনায় এসেছে। তারা হলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার খবর সঠিক নয়। এছাড়া দল এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটাও সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ, আমরা এই সংসদে একদিকে যেমন শপথ নিয়েছি, অন্যদিকে কিন্তু শপথ না নেওয়ার বিষয়ও ছিল।’ বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এ সরকার যে রকম নির্বাচন করে, তাতে ব্যক্তিগতভাবে আমি নির্বাচন করার পক্ষে নই। তবে দল যদি সংসদের সীমিত সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চিন্তা করে আমাকে বগুড়া থেকে উপনির্বাচন করার নির্দেশ দেয়, তাহলে প্রার্থী হবো।’
এই বিষয়ে জানতে রুহুল কবির রিজভীকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনার কিছুই তো জানি না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য দাবি করেছেন, বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম পছন্দ। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে চান না। সেই ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তিনি নিজেও নির্বাচন করার পক্ষে এই আসনে থেকে। এরআগে, ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে আসেন মওদুদ আহমদ। বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন চাঁন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এই বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে প্রার্থী করবেন, আমরা তার পক্ষ হয়ে কাজ করবো। তার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত।’ কয়েকদিন আগে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনাদের জানানোর মতো কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ’ শুক্রবার দুপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আমাদের উপনির্বাচন করার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু মির্জা ফখরুল নির্বাচন করতে নারাজ, সে কারণে অন্য প্রার্থী ঠিক করতে হবে। আমরা এখনও তা ঠিক করিনি।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে মির্জা ফখরুল বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন ও সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।