মৃণাল হক, মিনা ফারাহ, তসলিমারা এক গোয়ালের সুশীল
আমার পরিচিত একজন সিনিয়র ব্যক্তির সাথে দেখা হল অনেকদিন পরে। পেশায় চাটার্ড একাউন্টেন্ট। দেড় বছর আগে শেষ দেখা হয়েছিল। এরপর সবাই যার যার ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় নিমগ্ন ছিলাম। তিনি প্রচুর বই পড়েন। পুরনো নতুন কোন লেখকের বই পড়া তিনি বাদ দেননি আজ অবধি। দেড় বছর পর দেখা উনার সাথে। সাথে তার স্ত্রী ও দুই কন্যা ছিল। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবচেয়ে বড় টেবিলটি দখল করে বসলাম। ভাস্কর্য অপসারণ এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। দেশে বিদেশে তুমুল আলোচিত বিষয় দেবী থেমিসের ভাস্কর্য। চাটার্ড একাউন্টেন্ট ভাইয়া মূর্তি প্রেমীদের উপর চটে আছেন। বিশেষ করে যারা এই ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আজেবাজে উক্তি করেছে, তাদেরকে এক পশলা গালাগাল করে মনকে প্রশান্তি দিলেন। উনার স্ত্রী হেসে কুটিকুটি। ভাবী সাহেবা কখনো চেয়ারে কাত হয়ে পড়লেন, তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি এসব কথাবার্তা কোন ইউনিভারসিটি থেকে শিখেছ বলো তো?” ভাইয়া হাসছেন না মোটেও। কিন্তু তিনি অন্যদেরকে হাসাচ্ছেন। তসলিমা নাসরিনকে “ভেটকিমাছ” বলে আখ্যা দিলেন। ভেটকিমাছ নাকি এখন মূর্তি ইস্যু নিয়ে ল্যাং মারতে চাইছে। কিন্তু সে তো আল্লাহ খোদা পূজা দেব দেবীতে বিশ্বাস করে না। তাহলে দেবী থেমিস নিয়ে কেন ডাবল ফেস দেখাচ্ছে? ভাইয়ার উক্তিটি ডাইরেক্ট বরাবর সহী জায়গায় পড়েছে। ঠিকই তো বলেছেন তিনি। তসলিমা নাসরিন দেব দেবী মূর্তির পক্ষে কথা বলে কোন্ মুখে? তার মুখে ট্রাক ড্রাইভারের দুর্গন্ধযুক্ত মোজা ঘষে দেয়া উচিত। আসলে এই মহিলাকে এখন কেউ কেশ/ পশম দিয়েও পুছে না। তাই কিছু একটা লিখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চায়। প্রচারে থাকার জন্য কত কঠোর অধ্যাবসায় তার। ভণ্ডামির র্যাংকিংয়ে তসলিমা নাসরিন নাম্বার ওয়ানে অবস্থান করছে। শুনলাম চিনি রোগে ধরে গেছে। তাই হয়ত মেন্টালি ইমব্যালান্সড। কলমে সৃজনশীলতা নেই, আছে নোংরামি আর বেহায়াপনা।
প্রধানমন্ত্রী এই ভাস্কর্য নিয়ে চমৎকার উক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, এটার আগাগোড়া কোন সাইজ নাই। কি মনে করে ওটাকে শাড়ি পরিয়ে দেয়া হল বুঝলাম না। জোর করে দেবী থেমিসের স্ট্যাচুকে “গ্রীক – বঙ্গ নারীর” রুপ দেয়া হল। কিন্তু কেন? এই কেন’র উত্তর সচেতন ব্যক্তিরা বের করেছেন। আগে এই ভাস্কর্যের রুপকার মৃণাল সাহেবের ব্যাকগ্রাউন্ডে যেতে হবে।
ভাস্কর মৃণাল হক নামক ব্যক্তির নির্মিত গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য হাইকোর্টের সামনে কেন স্থাপন করা হল? এটি কার অনুমোদনে করা হল? ২০১৫ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায়। গ্রীক স্ট্যাচুকে যারা ন্যায় বিচারের প্রতীক মনে করছেন, তারা জ্ঞানের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। কি সুগভীর চক্রান্ত কাজ করেছে এখানে ভেবে দেখার আগে ভাস্কর মৃণাল হক সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নিই। কে এই মৃণাল হক? অতীতে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। তার বাবা অধ্যাপক একরামুল হকও বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। রাজশাহীতে জঙ্গি উত্থানের অন্যতম মদদদাতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক মৃণাল হকের ভগ্নীপতি। মৃণাল হক বিএনপি ঘরানার জেনুইন পারসন। নব্বইয়ের দশকে নিউইয়র্কে এই জেনুইন ব্যক্তি মারাত্মক ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করেছিলেন – “ইচ্ছে ছিল আমি নিজে গিয়ে শেখ মুজিবকে হত্যা করি।”
এই ব্যক্তির নির্মিত অশ্লীল গ্রীক দেবী থেমিসের মূর্তি কিভাবে আমাদের হাইকোর্টের সামনে স্থাপিত হয় সেটিই ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মৃণাল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে উক্তি করেছেন, এতে করে তাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। শাহবাগীরা দেবী থেমিসের জন্য কুমীরের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। শাহবাগীরা বুঝেও আন্দোলন করে, আবার না বুঝেও আন্দোলন করে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বিষয়ে তীব্র আন্দোলনের প্রথম ডাকটি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এসেছিল। শুরুর দিকে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু এরপর যত নষ্টামি ভ্রষ্টামি ইতরামি সব শুরু ওই মঞ্চ থেকে। একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় ইমরান এইচ সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে। প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ূন আজাদের বখাটে ছেলে অনন্য আজাদ ও তার গার্লফ্রেন্ড শাম্মীদের মত নষ্ট হয়ে যাওয়া বহু তরুণী যুবতী গণজাগরণ মঞ্চের ছাতা মাথায় ধরে নোংরামির রাজত্ব করেছে। ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে নাস্তিক্যবাদের ভুল ডেফিনেশন। প্রকৃত নাস্তিক কখনো অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেনা। কিন্তু অনন্ত বিজয় দাশ, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়, ওয়াশিকুর রহমান, রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবাদের ধৃষ্টতা মহামারী আকারে ছড়িয়ে সমাজে কুৎসিত প্রভাব ফেলেছে। একজন লেখক সমাজের প্রতিনিধি। তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু অভিজিৎ রায়ের মত বিজ্ঞানমনস্ক লেখক যখন সমাজের প্রতি দায়দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ভিনদেশে রাজকীয় আয়েশে পায়ের উপর পা তুলে নিজের জ্ঞান সৃষ্টিশীলতাকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অপচয় করেছেন। তরুণ সমাজকে উস্কানি দিয়ে বিপথগামী করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল অভিজিৎ রায়ও বাঁচতে পারেন নি। কোন হত্যাকে আমরা সমর্থন করিনা। কিন্তু মানুষকে ক্ষেপিয়ে অভিজিৎ রায় প্রচুর ভুল করেছেন। তার সাথে সাথে কিছু তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। “আমরা অভিজিৎ হব” — শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ যারা তারা আদৌ বুঝতে পারছেনা অভিজিৎ বাবু ভুল করে গেছেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য ব্যথিত। অভিজিৎ রায় সমাজে আলো ছড়াননি। বরং কালো থাবার মুখে ফেলে দিয়েছেন তরুণদেরকে।
এরপরের নাটক তো আরও দুর্দান্ত। ব্লগার হত্যা একটি ইস্যু হয়ে উঠল। ইমরান এইচ সরকার পলিটিকাল এসাইলাম পদ্ধতি তরান্বিত করার জন্য গণজাগরণ মঞ্চের সিল মেরে সার্টিফিকেট দিতে শুরু করলেন। সেইসব সার্টিফিকেট বিদেশি দুতাবাসে সাবমিট করে বহু দুর্বৃত্ত বিদেশে পালিয়ে গিয়ে রিফিউজি স্ট্যাটাস নিলো। এখনো মাঝে মাঝে ওই দুর্বৃত্তরা সুযোগ পেলেই নিজের কুচক্রী রুপ নিয়ে প্রকট হয়। এরা বিদেশে বসে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে।
মৃনাল হকের সাথে গলাগলি করে বহুজনকে কাঁদতে দেখছি। হাসি পায় তাদের কর্মকাণ্ড দেখে। গ্রীক দেবী থেমিস যুগ যুগান্তরের বিষয় নয়। হাইকোর্টের সামনে অশ্লীলতার প্রতীক থাকার কোন যৌক্তিক কারণ দেখছি না। ২০১৫ সালে কেন এই অশ্লীল স্ট্যাচুর স্থাপনা হল তার জবাব কে দেবে? কেন ভাস্কর মৃণাল হক নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ পেলেন? কাদের ইন্ধনে এসব হচ্ছে? বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের আরেকটি নগ্ন প্রয়াস হল গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য। মৃণাল হক কখনো প্রলাপ বকছেন। তিনি দেবী থেমিসকে বলছেন, বাংলার নারীর প্রতিচ্ছবি। মূর্তির গায়ে শাড়ি পরিয়ে দিলেই সে বাঙালি হয়ে যাবে এমন কথা মেনে নেবার কোন কারণ নেই। মৃনাল হকের নিউইয়র্ক প্রবাসী বান্ধবী মিনা ফারাহ দারুন গুরুচাণ্ডালী শুরু করেছেন। মিনা ফারাহ’র নিজেকে আলোচিত করার নানান তন্ত্রমন্ত্র জপেও ফ্লপ হয়েছেন। মিনা ফারাহ’র অফিসের সামনের মুরালও নাকি মিঃ জিনিয়াস মৃণাল হকের সৃষ্টিকর্ম। সব শিয়ালের এক রা। সুশীল নামধারী চণ্ডালদের কঠোরভাবে দমন করা হোক।
লেখক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী