মেয়েকে ইভটিজিংয়ের বিষয়টি র‌্যাবের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন মা রাহেলা বেগম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নিজ বাসায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন হন একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মুন্নী (১৯)। গত শনিবার রাত ৮টায় দিরাই উপজেলার দিরাই পৌর শহরের মাদানী মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। মুন্নী সুনামগঞ্জের দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। আর খুনি ইয়াহিয়া সর্দার (২২) এলাকার চিহ্নিত বখাটে। উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামের জামাল সর্দারের ছেলে সে। যত দ্রুত সম্ভব পলাতক খুনিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, আইজিপি ও ডিআইজি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।
জানা যায়, মুন্নীর বাবা হিফজুর রহমান ইতালি প্রবাসী। তাদের বাড়ি দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামে। মা রাহেলা বেগম মেয়ে মুন্নী ও ছেলে মাহিদ রহমানকে নিয়ে দিরাই পৌর শহরের আনোয়ারপুর নয়াহাটি মাদানী মহল্লায় বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। শনিবার রাত ৮টার দিকে ইয়াহিয়া ঘরে ঢুকে মুন্নীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। মেয়ের চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে মা রাহেলা বেগম দৌড়ে এসে দেখেন খুনি পালিয়ে যাচ্ছে। রাহেলার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে রক্তাক্ত মুন্নীকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, মেয়েটির পেটে ও বুকের বাঁপাশে আঘাত রয়েছে। আইজিপি ও ডিআইজি স্যার নির্দেশ দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব খুনিকে গ্রেপ্তার করার জন্য। আমরা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দিরাইয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং খুনিকে গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
রাহেলা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমার মুন্নী। তাই ভালোভাবে লেখাপড়া করানোর জন্য গ্রামের বাড়ি ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে আমি শহরে বাবার বাসায় থাকছি। কিন্তু বখাটে ইয়াহিয়া বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে, এমনকি বাসার সামনে এসেও আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। আমি ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না আমার মেয়ের। স্বজনরা জানান, বখাটে ইয়াহিয়া স্কুলছাত্রী মুন্নীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। এ বিষয়ে দুমাস আগে র‌্যাব ৯-এর সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। র‌্যাবের পক্ষ থেকে তখন দুপক্ষকেই ডাকা হয়। তবে সেখানে ইয়াহিয়া আসেনি, কেবল তার বাবা জামাল সর্দার এবং মুন্নীর মা রাহেলা বেগম আসেন। র‌্যাব অধিনায়ক তখন ইয়াহিয়ার বাবাকে শাসিয়ে দেন এবং ছেলেকে ভালো পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেন। ইয়াহিয়ার বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে তখন আশ্বস্ত করেন। র‌্যাব ৯-এর অধিনায়ক লে. কমান্ডার ফয়সল আহমদ জানান, ওই ছেলেটির বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রী মুন্নীকে নানাভাবে উত্ত্যক্তের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে দুপক্ষকেই সুনামগঞ্জে ডাকা হয়। তখন ছেলের বাবা এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। পরবর্তী সময় উত্ত্যক্ত করলে থানায় লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর কোনো কিছুই জানানো হয়নি।

হত্যা মামলা দায়ের, আটক ১

 দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হুমায়রা আক্তার মুন্নী হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার নিহতের মা রাহেলা বেগম বাদী হয়ে ঘাতক ইয়াহিয়া ও তার সহচর তানভীর আহমদ চৌধুরীকে  আসামী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-১০, তারিখ ১৮-১২-১৭) বিশেষ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ মামলার আসামী তানভীর আহমদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে মুন্নী হত্যার দুইদিন পরেও ঘাতক ইয়াহিয়া(২২) কে গ্রেফতার করতে না পারায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। উল্লেখ্য যে  শনিবার রাত ৮টার দিকে দিরাই পৌরসভার মাদানী মহল্লায় বাসার দ্বিতীয় তলায় মুন্নির লেখাপড়ার কক্ষে প্রবেশ করে  ছুরিকাঘাতে খুন করে ইয়াহিয়া সরদার (২২)। মুন্নির চিৎকার শুনে পাশের কক্ষ থেকে তার মা রাহেলা খাতুন মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতক।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn