মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা’র নানা খবর
মৌলভীবাজারে দুটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশ, গুলি-বিস্ফোরণ
সিলেটে জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষ হওয়ার পরদিনই বুধবার মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। দুটি জঙ্গি আস্তানার একটি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। অপরটি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজারের কাছে ফতেহপুর গ্রামে। এর মধ্যে সরকার বাজার এলাকার জঙ্গি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। সিটিটিসির এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মৌলভীবাজারে দুটি আস্তানায় জঙ্গিদের হাতে বিপুল অস্ত্র বিস্ফোরক রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। উভয় আস্তানাতেই জঙ্গিরা সিলেটের শিববাড়ির আস্তানার মতো শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেভাবেই অভিযান চালানো হচ্ছে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, সরকার বাজারের ঐ বাড়িটি ঘিরে গোলাগুলির অাওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বড়হাটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নাশকতা এড়াতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অভিযানস্থলের অদূরে দমকল ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার ভোর থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় অবস্থিত একটি বাড়ি এবং সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকায় নাসিরপুরে অবস্থিত অপর বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দুটি বাড়ীর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানার উদ্দেশে সোয়াট
মৌলভীবাজারের দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে সোয়াট টিম। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সোয়াটের একটি টিম মাইক্রোবাসযোগে ঢাকা থেকে রওনা দেয় বলে জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আজ বুধবার ভোররাত থেকে দুটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এর মধ্যে নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। এ ছাড়া গোলাগুলিও চলছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অভিযান শেষ না হতেই মৌলভীবাজারে এ ঘটনা ঘটল।
মৌলভীবাজারে দুই ‘জঙ্গি আস্তানা’র মালিক একজন
মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘিরে রাখা পৃথক বাড়ি দুটির মালিক লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমান। স্থানীয় লোকজন ও বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধানে থাকা সাইফুর রহমানের এক আত্মীয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মৌলভী-বাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একটি বাড়ি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় অবস্থিত। অপর বাড়িটির অবস্থান সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর এলাকায়। দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
আজ বুধবার সকালে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল জানান, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে। বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাইফুর রহমানের মামাতো বোনের স্বামী জুয়েল। নাসিরপুরের বাড়িতে টিনের চালার তিনটি ঘর আছে। একটি ঘরে পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন। একটি ঘরে এক রিকশাচালক থাকেন। অন্য ঘরটিতে ভাড়াটেরা থাকেন।
জুয়েলের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নাসিরপুরের ঘরে গত জানুয়ারিতে বর্তমান ভাড়াটেরা ওঠেন। ভাড়াটে তার নাম বলেছেন মাহফুজ, বাড়ি টাঙ্গাইল। তিনি নিজেকে আরএফএল কোম্পানির ডিলার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ৭ হাজার টাকায় ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়। ঘরে আট সদস্য থাকতেন।
মৌলভীবাজার পৌরসভার বাড়ির ভাড়াটে সম্পর্কে জুয়েল বলেন, সেখানকার ভাড়াটে তার নাম বেলাল বলেছেন। তিনি নিজেকে আরএফএলের ম্যানেজার পরিচয় দিয়েছেন। নাসিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা নান্নু মিয়া চৌধুরী জানান, লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমান আজ ভোরে তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। নাসিরপুরের বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটিয়াকে ডাকতে বলেন।
তিনি বলেন, সাইফুর রহমানের ফোন পেয়ে তিনিসহ ৫-৬ জন ওই বাড়িতে যান। তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। ভাড়াটিয়ার ঘরে কলিং বেল দিলে ভেতর থেকে একজন দরজা খোলেন। পুলিশ দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দেন। একটু পরে ঘরের ভেতরে হাতুড়ি পেটানোর মতো করে একটা শব্দ হয়। এরপরই পুলিশ উপস্থিত সবাইকে সরে যেতে বলে। একটু পরে ওই বাড়ি থেকে বিকট শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনার সময় ওই বাড়ি থেকে সাইফুর রহমানের মামাতো বোন ও রিকশাচালকের পরিবার সরে যায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেছেন, নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে নাসিরপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার আশেপাশ থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা এসেছে।
মৌলভীবাজারে ২ আস্তানায় এক ডজন জঙ্গি!
মৌলভীবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘেরাও করে রাখা দুটি আস্তানায় একডজন জঙ্গি রয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। তাদের আটক করতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে ঘটনাস্থলে থাকা র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মঙ্গলবার রাত থেকে মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট ও সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজারের কাছে ফতেহপুর গ্রামের ওই দুটি জঙ্গি আস্তানা ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ। বড়হাটের আস্তানাটি একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে, আর ফতেহপুরের আস্তানাটি একটি একতলা বাড়িতে।