সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, যত্রতত্র ফেসবুক লাইভ একধরণের উপদ্রব। এতে কোনো বাছ-বিচার থাকছে না। ফেসবুক মিডিয়ায় অবাধে সংবেদনশীল অনেক বিষয় তুলে ধরছে। সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিস্কৃত উপপরিদর্শক (এসাআই) আকবর হোসেন ভূইয়াকে আটকের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এমনটি বলেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার। রায়হানের মৃত্যুর ২৭ দিন পর্ গত সোমবার সকালে আকবরকে আটক। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানায় পুলিশ। তবে পুলিশের এমন দাবির আগেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আকবরকে আটকের কিছু ভিডিও নিয়ে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা। এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসপি ফরিদ উদ্দিন বলেন, ওইসব ভিডিও এবং তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা প্রসঙ্গে আমি কিছু বলব না। এসব বিষয়ে যারা বলছেন, সেটা তাদের বিষয়। ভিডিওগুলো আমরা দেখছি। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া (মূলধারার গণমাধ্যম) ছাড়া কিছু ফেসবুক মিডিয়া অবাধে সংবেদনশীল অনেক বিষয় তুলে ধরছে। এটা এক ধরনের উপদ্রব। যত্রতত্র লাইভ, কোনো বাছ-বিচার থাকছে না। সীমান্ত এলাকার সংবেদনশীলতাও মানা হয় না। প্রযুক্তির প্রসারে এমন উপদ্রব নানা বিড়ম্বনাও তৈরি করছে। নানা বিষয় উসকে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। অপপ্রচারেই তা হচ্ছে।
আকবরকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এসপি বলেন, দীর্ঘ নজরদারিতেই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আমাদের চেষ্টার সঙ্গে কিছু বিনিময়ও হয়েছে। এই বিনিময় খোলাসা করতে পারব না। গ্রেপ্তার অভিযানে আমাদের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট থানার পুলিশসহ কিছু সীমান্ত সোর্স, যাঁদের আমি বন্ধু বলি, তারা সহায়তা করেছেন। কানাইঘাটের আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করেছেন। আমরা কোনো ক্রেডিট নিতে চাই না, এটা পুলিশের রুটিন কাজ। পুলিশের এই কাজে সহায়তা করায় সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। ফরিদ উদ্দিন বলেন, আকবর পুলিশের একজন সদস্য ছিলেন। যে ঘটনাটি ঘটেছে (রায়হানের মৃত্যু) তা নিয়ে আমরা চরমভাবে মর্মাহত। আরও মর্মাহত হই আকবরের পলায়নে। পরিকল্পনা আলাদা কিছু ছিল না। সিলেট জেলার বড় একটি অংশ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। কোনো অপরাধ ঘটলেই আমরা অপরাধীদের খুঁজতে সবার আগে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়ে দিই। আকবরের বেলায় সীমান্তের সব থানায় একাধিক ছবি পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নজরদারি ও সোর্সদের তৎপরতায় আকবর ধরা পড়েছেন। আকবর পালিয়ে কোথায় ছিলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। আমাদের বলার বিষয় হচ্ছে, আকবরকে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
পালিয়ে যাওয়ার পর আকবরের অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৪ অক্টোবর থেকে আমরা আকবরকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টায় নামি। এই চেষ্টার শুরুর পর্যায়টা পলাতক আকবরকে শনাক্ত করার পর্যায় ছিল। এরপর আমরা ধাপে ধাপে চেষ্টা অব্যাহত রাখি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব, এই মনোবল ছিল। আমাদের এই চেষ্টা শুধু জেলা পুলিশ নয়, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত তৎপরতা ছিল। নগর পুলিশ, তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই সবার সহায়তা ও সমন্বয়ের ফলে আকবরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তা প্রসঙ্গে ফরিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাকুক না কেন, এই পুলিশই মানুষের সবচেয়ে কাছের। এই ঘটনা জনগণের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। আমরা জনগণের অনুভূতি বুঝতে পেরেছি। বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে সুপারভিশন হচ্ছে। গাফিলতি থাকলে অবশ্যই দেখা হবে। এ ব্যাপারে আসলে আমার বলার কিছু নেই। সূত্র : প্রথম আলো
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৪৬ বার