যার নির্দেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়িতে হামলা হয়েছিল
২৯ বছর আগে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়িবহরে সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল। রোববার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর মো. রুহুল আমিনের আদালতে এ কথা বলেন মামলার দুই সাক্ষী অশোক বিশ্বাস ও আবু ছৈয়দ। সাক্ষী অশোক বিশ্বাসের ভাই সিটি কলেজের তৎকালীন ছাত্র স্বপন বিশ্বাস সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তৎকালীন কলেজ শিক্ষক আবু ছৈয়দ সেদিন পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
আদালতে জবানবন্দিতে অশোক বিশ্বাস বলেন, তাদের বাসা ছিল শহরের জামালখান এলাকায়। সকালে তার ভাই স্বপন বিশ্বাস বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলে যান, তিনি শেখ হাসিনার জনসভায় যাচ্ছেন। দুপুর ২টার সময় তিনি শুনতে পান, শেখ হাসিনার জনসভায় পুলিশ গুলি করে অনেককে মেরে ফেলেছে। তিনি ভাইকে কোথাও খুঁজে পাননি। পরদিন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ভাইয়ের মরদেহ পান। কিন্তু ভাইয়ের মরদেহ চেয়েও পাননি। ওইদিন বিকেলে পুলিশের তত্ত্বাবধানে তার ভাইয়ের মরদেহ নগরীর বলুয়ারদিঘী মহাশ্মশানে দাহ হয়।
তিনি বলেন, রকিবুল হুদার নির্দেশে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এদিকে জবানবন্দিতে আবু ছৈয়দ জানান, ঘটনার সময় তিনি কবিরহাট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লালদিঘীতে আট দলের জনসভায় যাবার উদ্দেশে কয়েকজন নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেন। ১টার দিকে শেখ হাসিনা নিউ মার্কেট মোড় পার হন। নেত্রীর গাড়িবহরের পেছনে পেছনে মিছিল নিয়ে আসার সময় জিপিওর কাছে এলে অনবরত গোলাগুলির শব্দ পান।
আবু সৈয়দ বলেন, নিউ মার্কেটের মোড় থেকে সাইকেল মার্টের দিকে যাবার সময় তিনি পুলিশের মারধরের শিকার হন। আত্মরক্ষার্থে তিনি সাইকেল মার্টের ভেতরে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে বেধড়ক পেটায়। এতে তার হাতের হাড় ভেঙে যায়। সেদিন মির্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে পুলিশ গুলি করে ২০-২৫ জনকে হত্যা করার কথা তিনি শুনেছেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন আবু ছৈয়দ।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদিঘি ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ।
নিহতরা হলেন, হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম. স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে তখনকার সিএমপি কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- কোতোয়ালী জোনের তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মণ্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মুশফিকুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো.আবদুল্লাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। আগামী ৩ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।