রকির বাড়িতেই পরিকল্পনা হয় বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্ত করতে দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ তৈরির চেষ্টার অভিযোগে বিতর্কিত রকি বড়ুয়ার বাড়িতেই চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা বিবিরবিলা এলাকায় স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা হয়। পুরো হামলার সঙ্গে রকি বড়ুয়ার অনুসারী ১৫-২০ জন জড়িত থাকলেও বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের কাজে ৩ জন অংশ নেন। অন্যরা হামলায় সহযোগী ও ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করেন। পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধকে ধর্মীয় সংঘাতে রূপ দিয়ে ফায়দা লুটতে পরিকল্পনা করেন রকি বড়ুয়া। ঘটনার আগে ৩ মে দিবাগত রাতে তার বাড়িতেই হামলার প্রক্রিয়া ও কারা অংশ নেবেন তা নিয়ে বৈঠক হয়। ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়। ৪ মে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অনুসারীদের দিয়ে গুজব ছড়াতে থাকেন রকি বড়ুয়া।
শনিবার (১৬ মে) বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনায় রকি বড়ুয়ার বাবা জয়সেন বড়ুয়ার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার কামাল উদ্দীন নামে এক আসামির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কামাল উদ্দীন। এর আগে শুক্রবার (১৫ মে) রাতে লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে কামাল উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে কামাল উদ্দীন উল্লেখ করেন- তিনিসহ মোট ৩ জন মন্দিরে সরাসরি হামলায় অংশ নেন। হামলার পাহারায় রকি বড়ুয়ার নির্দেশে আরও ১৫-২০ জন বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারা দেন। হামলার আগে প্রায় দুই ঘণ্টা রকি বড়ুয়ার বাড়িতে সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনায় জয়সেন বড়ুয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন। শুক্রবার রাতে আমরা হামলার সঙ্গে জড়িত কামাল উদ্দীন নামে একজনকে গ্রেফতার করি। শনিবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কামাল উদ্দীন।
পুলিশ কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, কামাল উদ্দীন হামলায় জড়িতদের নাম জানিয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। অস্ত্র-মাদকসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা রকি বড়ুয়াকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গত ৪ মে ভোরে লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা বিবিরবিলা এলাকায় বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলার ঘটনায় জয়সেন বড়ুয়া বাদি হয়ে লোহাগাড়া থানায় মামলা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল রকি বড়ুয়া তার বাহিনী দিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ৩১ মার্চ রাতে রকি বড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির জন্য সাঈদী পুত্র মাসুদ সাঈদী ও তারেক মনোয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারপর থেকে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। রকি বড়ুয়া নিজেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিচয় দিয়ে দেশে বিদেশে প্রতারণা করে আসছিলেন। সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা প্রচার করে নিজের প্রভাব জাহির করতেন তিনি। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এলাকার মানুষ।