রেনু হত্যায় অংশ নেয়ার কথা স্বীকার হৃদয়ের
বার্তা ডেস্ক :: রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে তাসলিমা বেগম রেনুকে গণপিটুনিতে হত্যার মূল হোতা হৃদয় প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ঘটনার দিন স্কুল গেটে থাকা এক নারীর প্ররোচনায় সে গণপিটুনিতে অংশ নেয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে।মারধরে জড়িত কয়েকজনের নামও জানিয়েছে হৃদয়। বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, হৃদয়কে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানিয়েছে ঘটনার দিন রেনু স্কুলে প্রবেশ করার সময় গেটে থাকা অন্য এক নারী অভিভাবক তার পরিচয় এবং বাসার ঠিকানা জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেনু ওই নারীকে তার নাম-ঠিকানা জানান। সে সময় ওই নারী রেনুকে দেখিয়ে ছেলেধরা বলে চিৎকার করেন। এর মধ্যে রেনুকে স্কুলের একটি কক্ষে বন্দি করা হয়। ছেলেধরার গুজবটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে কয়েকশ মানুষ ভিড় জমায় স্কুলের আশপাশে। এদের মধ্যে উৎসুক জনতা স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে রেনুকে বের করে পিটুনি দেয়। হৃদয়ও তাদের সঙ্গে অংশ নেয়।
হৃদয় জানায়, সে স্কুলের পাশে একটি দোকানে সবজি বিক্রি করে। ওই দিন সবজি বিক্রি শেষে সে স্কুলের কাছে দাঁড়িয়েছিল। রেনুকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখেছিল সে। ঘটনার পর সে (হৃদয়) যখন বুঝতে পারল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে তখন নারায়ণগঞ্জে পালিয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন বলেন, রেনু এবং ওই নারী (যে চিৎকার দেয়) পূর্বপরিচিত কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বলা যাবে। কারণ রেনুকে দেখে তিনিই প্রথম ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার করেছিলেন। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেফতার করে ডিবি পূর্ব বিভাগ। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের পূর্ব বিভাগের একটি টিম।
বাড্ডা থানা পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, শনিবার সকালে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তাসলিমা বেগম। তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে স্কুলের গেটে কয়েকজন নারী তাসলিমার নাম-পরিচয় জানতে চান। পরে লোকজন তাসলিমাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে কয়েকশ লোক একত্র হয়ে তাসলিমাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়। স্কুলের ফাঁকা জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর জখম করে। পরে উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তাসলিমার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় অজ্ঞাতনামা চারশ থেকে পাঁচশ মানুষকে আসামি করে মামলা করেন। নিহত তাসলিমার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। মহাখালীতে চার বছরের মেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকতেন তাসলিমা। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১১ বছরের এক ছেলেও আছে নিহত তাসলিমার। সৌজন্যে : যুগান্তর