লোকবলসংকটে ব্যাহত কার্যক্রম
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ হাজার ৪৬১টি। এসব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ৪ লাখ ১৩ হাজার। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের ১৫৮টি এবং সহকারী শিক্ষকের ৮৩৮টি পদ শূন্য। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ১১টি পদেই কোনো লোক নেই। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ৬১ পদের মধ্যে ৩৮টি শূন্য। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে উচ্চমান সহকারী থাকার কথা, কিন্তু আছেন মাত্র দুটি উপজেলায়। অফিস সহকারীর ২১টি পদের মধ্যে ১৩টি পদ শূন্য। দুটি উপজেলায় হিসাব সহকারী নেই। ১৪
জন অফিস সহায়ক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১ জন।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে আছেন ৬ জন। ৪ জন অফিস সহায়ক থাকার কথা থাকলেও ১ জনও নেই। নেই উচ্চমান সহকারী; অফিস সহকারীর ৩টি পদের মধ্যে ২টিই শূন্য। কার্যালয়ের অফিস সহকারী বিপ্লব চন্দ্র দাস বলেন, ‘চার-পাঁচজনের কাজ একাই করতে হয়, এটা কীভাবে সম্ভব। শিক্ষকেরা সামান্য কাজ নিয়ে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। তখন নিজেরই খারাপ লাগে। কী করব, কোনো উপায় নেই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এমনিতেই হাওরের জেলা হিসেবে সুনামগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। অনেক স্থানে ইচ্ছে করলেই দ্রুত যাতায়াত করা যায় না। তার ওপর যদি প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকে তাহলে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে শিক্ষার মান খারাপ হতে বাধ্য। তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় কোনো কাজ নিয়ে শিক্ষকেরা সেখানে গেলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় শিক্ষকেরা ফাইল নিয়ে অফিসে গিয়ে নিজেরাই নিজের কাজ করেন। অফিসে চারজনের কাজ করেন একজন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন রশিদ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় দাপ্তরিক কাজে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি শিক্ষা কার্যক্রমেও এর প্রভাব পড়ে। অনেক সময় শিক্ষকদের ফাইল মাসের পর মাস আটকে থাকে। হাওরের শিক্ষার মান বাড়াতে হলে এখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং কার্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ দিতে হবে।’
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, লোকবলসংকটের বিষয়টি প্রতিমাসের প্রতিবেদনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দ্রুত পূরণ করা হবে। গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘কাজ হচ্ছে, তবে বেশি লোকের কাজ কম লোকে করলে সেই কাজটা মান সম্মত না-ও হতে পারে। আমরা করছি, তবে লোকবলসংকট না থাকলে কাজ আরও ভালো হতো, এটাই হলো কথা।’