শাকিব-অপুর কারনে কোটিকোটি টাকা লোকসানের মুখে প্রযোজকরা
বিনোদন ডেস্ক:: আনুষ্ঠানকিভাবে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে ঢালিউডের আলোচিত জুটি ও সমালোচিত দম্পতি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হলো ১২ মার্চ। যতোটা ভালোবাসা আর আদিখ্যেতা নিয়ে তারা কাছে এসেছিলেন, বিয়ে করেছেন সবার আড়ালে ঠিক একে অপরের প্রতি ততোটাই ঘৃণা নিয়ে তারা সরে গেলেন দাম্পত্যের সম্পর্ক থেকে। রাজপুত্রের মতো ফুটফুটে বাচ্চাটিও দুই তারকাকে এক হয়ে থাকার শক্তি যোগাতে পারেনি। ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্যারিয়ারের লোভের কাছে হেরে গেল প্রেম, সংসারের দায়বোধ, সন্তানের প্রতি মমতা। শাকিব-অপুর মধ্যে সম্পর্ক এখন মুখ দেখাদেখিতেও নেই। কেউ কারো আলোচনা শুনতেও পছন্দ করেন না। অপু কিছুটা নমনীয় ছিলেন প্রথমদিকে বটে, কিন্তু শাকিবের একরোখা ব্যবহারের মুখে তিনিও শেষপর্যন্ত শাকিবের জীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মেনে নেন ডিভোর্সের জন্য শাকিবের আবেদনও। এক মাঘে শীত যায় না। আবার শীত আসবে, শীত শেষে বসন্তে ডাকবে কোকিল, ফুটবে ফুল। হয়তো সম্পর্কে আজকে যে বৈরীতা তাও কেটে যাবে কোনো এক বসন্তে। শোবিজের তারকাদের মন বোঝা বড়ই দায়। তাদের মন-মানসিকতা, ব্যক্তিত্ববোধ, আবেগ-সিদ্ধান্ত নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলা মুশকিল। হয়তো ভালো বন্ধুত্বের দিকে হাঁটতেও পারেন শাকিব-অপু। কিন্তু এই দুই তারকার সম্পর্ক ভাঙনের ফলে বেশ ক’জন প্রযোজক নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়েছেন। প্রবাদের মতো বলা চলে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় নলখাগড়ার প্রাণ যায়। শাকিব-অপুর দূরত্বে কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশংকায় বেশ ক’জন প্রযোজক। একটা সময় ছিলো শাকিব খান সিনেমায় অভিনয় করতে চাইতেন না অপু বিশ্বাসকে ছাড়া। তাকে কোনো ছবির প্রস্তাব দেয়া হলেই প্রযোজক-পরিচালকদের তিনি বলতেন তার বিপরীতে অপুকে নেয়ার জন্য। এভাবেই অসংখ্য ছবিতে দেখা গেছে এই জুটিকে। গড়ে ওঠেছিলো দর্শক চাহিদাও। তবে সময় এখন উল্টো স্রোতে। শাকিবের পছন্দের তালিকায় অপু নেই।
শাকিবের ইচ্ছেতে অপুকে নিয়ে যাত্রা করা তেমনি কিছু ছবি হলো ‘পাংকু জামাই’, ‘লাভ ২০১৪’, ‘মা’, ‘মাই ডার্লিং’ প্রভৃতি। এইসব ছবির প্রায় প্রতিটি ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ। পুরো কাজ শেষ না করতে পারায় ছবির প্রযোজকরা ও পরিচালকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা অপেক্ষায় ছিলেন শাকিব-অপু তাদের কাজ শেষ করে দেবেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শাকিবকে অপু বিশ্বাসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেননি। অপু মাঝখানে দুটি ছবির শুটিংয়ে অংশ নিলেও শাকিব আসেননি। এরপর অপু নিজেও আর ওই ছবিগুলো নিয়ে আগ্রহ দেখাননি। তার বক্তব্য, ‘আমি কোনো প্রযোজক ও পরিচালককে আমার ব্যক্তিগত কারণে ক্ষতির মুখে ফেলতে চাই না। তারা যখনই আমার শিডিউল চেয়েছে আমি দিয়েছি। কিন্তু শাকিব তাদের সময় দেয়নি। সেই দায় আমার নয়। শাকিব যদি শুটিং করেত চায় আমার দিক থেকে সমস্যা নেই। নিজের পেশার প্রতি আমি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অপু বিশ্বাস ‘পাংকু জামাই’ ছবির নিজের অংশের কাজটুকু শেষ করেছেন। কিন্তু বারবার অনুরোধ করেও শাকিবের শিডিউল না পাওয়ায় প্রায় কোটি টাকা লগ্নি করা প্রযোজকেরা ছবির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত দেখে চোখে এখন সরষে ফুল দেখছেন। শোনা যাচ্ছে এইসব প্রযোজকেদর অনেকেই শাকিব-অপুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন। তারা দ্বারস্থ হবেন পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতির। প্রয়োজনে মামলা করতেও বাধ্য হবেন বলে ভাবছেন অনেকেই। মাই ডার্লিং’ ছবির পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ‘তারা যা করছেন সেটাকে পেশাদারীত্ব বলে না। বিরক্ত হয়ে আমার প্রযেোজক এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন। আমারও মনে হয় কঠোর না হয়ে আর কোনো উপায় নেই।’ এদিকে বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘একজন শিল্পীর যতোই ব্যক্তিগত সমস্যা থাকুক পেশার প্রতি তাকে মনযোগী হতে হয়। সিনেমা কোনো খেয়ালের জায়গা নয়। একটি সিনেমার পেছনে একজন প্রযোজক কোটি টাকা লগ্নি করেন। শাকিব-অপুর কারণে বেশ কয়টি ছবি আটকে আছে। তার মানে অনেক কোটি টাকা লোকসানের আশংকরা। সেইসব প্রযোজকেরা যদি কোনো উপযুক্ত প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান তবে সেটি তারা পারবেন। সেই অধিকার তারা রাখেন।’
তখন খুবই খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছিলো বলিউডের তুুমুল আলোচিত প্রেমিক-প্রেমিকা মিঠুন চক্রবর্তী ও শ্রীদেবীর মধ্যে। তারা নিজেদের কাছ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। হয়ে গিয়েছিলো ডিভোর্সও। পারতপক্ষে মুখ দেখাদেখিও করতেন না দুজনে। কিন্তু পেশাদারীত্বের প্রতি তারা ছিলেন যত্নবান। তার প্রমাণ এই জুটির শেষ ছবি ‘গুরু’। ১৯৮৯ সালে এই ছবির শেষদিকে পরিচালক যখন একসঙ্গে দুই তারকার শিডিউল পাওয়া নিয়ে ভাবছিলেন তখন মিঠুন আশ্বস্ত করলেন পরিচালক যেন দুশ্চিন্তা করেন। তিনি শ্রীদেবীর সঙ্গে ক্যামেরায় দাঁড়াবেন এবং ছবির বাকি কাজ শেষ করে দেবেন। আর শ্রীদেবীও রাজি হবেন নিশ্চয়তা দিয়ে পরিচালককে বলেছিলেন, ‘ডোন্ট ওরি, আমি কথা দিচ্ছি, তোমার শট শেষ হবে। শ্রী আমার থেকে যদি দূরে সরেও যায়, ছবি শেষ না করে যাবে না। ও কাজের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।’ এবং তাই হয়েছিলো। শোবিজে শোনা যায়, প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী ও সুবর্ণা মুস্তাফার ডিভোর্স যখন হয় তখন বেশ কিছু নাটকে তারা একসঙ্গে কাজ করছিলেন। ডিভোর্সের পর সেইসব কাজ তারা আটকে রাখেননি। হাসিমুখেই ক্যামেরার সামনে এসেছেন এবং নিজেদের স্বাভাবিক অভিনয়টা করে গেছেন। শুধু তাই নয়, সেইসব নাটকের একটির পরিচালক হুমায়ূন ফরীদি নিজে ছিলেন বলেও জানা যায়। শাকিব-অপু জুটিও ব্যক্তি দ্বন্দ্ব ও মন্দ সম্পর্ককে পাশ কাটিয়ে পেশাদারীত্বের সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাঁচিয়ে দেবেন নানা সংকটে ধুঁকতে থাকা ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজন প্রযোজককে, পাশে দাঁড়াবেন তাদের জুটির শেষ না হওয়া ছবির পরিচালকদের- এই প্রত্যাশা করাটা নিশ্চয় অন্যায় হবে না।