শাবিতে ভর্তি জালিয়াতি : তদন্তের নামে ৭ মাস পার
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক কিংবা গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও কোন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেগুলির কোন অগ্রগতি নেই। আজ পর্যন্ত হয়নি এসবের ফলাফল প্রকাশ। ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর শাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই আল আমিন নামে ছাত্রলীগকর্মীকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। আটকের ১৫ দিন পর রোববার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। ১৮ ডিসেম্বর সকাল নয়টা থেকে ‘বি’ ইউনিট এবং ২০ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ‘এ’ ইউনিটে (বিজ্ঞান বিভাগে) ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
২০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ‘এ’ ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি কার্যক্রমের সময় হোসাইন রাব্বি নামে এ ইউনিটে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া এক শিক্ষার্থী প্রক্সিও মাধ্যমে ভর্তি জালিয়াতি করেছে এমন সন্দেহে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আটক করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে। সে ওইদন ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়। ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাব্বি এখনও পর্যন্ত কোন ক্লাস করেনি এমনকি ক্যাম্পাসেও আসেনি। তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান- রাব্বি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও কোন ধরনের ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।
পৃথক তদন্ত কমিটি, নেই অগ্রগতি: ওইসময় জালিয়াতি ও আল আমিনকে আটকের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতির ঘটনায় ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলামকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক কবির হোসেন, ড. রাশেদ তালুকদার, ড. বেলায়েত হোসেন ও শাহপরান হল প্রভোস্ট শাহেদুল হোসেন।
এছাড়া হোসাইন রাব্বি নামে সন্দেহভাজনকে আটকের ঘটনায় ডিসেম্বরে পৃথক ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটির প্রধান অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোন তদন্তের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। রাব্বিকে আটকের ঘটনায় অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, অধ্যাপক কবির হোসেন, ড. সাবিনা ইসলাম, ড. জহিরুল ইসলাম, ড. এ এইচ এম বেলায়েত হোসেন ও রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন। প্রক্সি দিয়ে ভর্তির অভিযোগ উঠার পর গত ২১ ডিসেম্বর সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ ঘটনায় ভর্তি হতে আসা আল আমিনকে সন্দেহ হলে তদন্ত কমিট গঠন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এসময়ে বসেনি তদন্ত কমিটির কোন মিটিং বলে জানান ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম।
অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন- ভর্তি পরীক্ষায় অন্যকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ উঠে মোহাম্মদ হোসেন রাব্বি নামের এক শিক্ষার্থীর উপর। তারই প্রেক্ষিতে পরদিন ২১ ডিসেম্বর বুধবার সাত সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ দীর্ঘ সময়ে কমিটির কোন সভা বা মিটিং বসেনি। তবে কোন প্রকার মিটিং বা সভা যদি বসেও সেটা আমাকে জানানো হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শাবির ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়- গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ‘এ’ ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। আর এ দিনেই অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মো. হোসেন রাব্বিকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তি করানো হয়। তিনি ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথমস্থান অধিকার করেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হোসেন রাব্বি রংপুর ক্যান্ট. পাবলিক কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাশ করেছেন।
দীর্ঘ সময়েও কেন তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম জানান- এ আলসেমির তো কোন মানে হয় না। আমাদের কাজ নরমাল আর সেটা শেষ হয়েছে। এটা হলো টেকনিক্যাল কাজ। ছবি ও তাকে মিলানো। আর সেটা পার্সপোর্ট অফিসের এক্সপার্ট দিয়ে দেখানো হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে সেটা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের সাথে। তিনি জানান- হ্যান্ড রাইটিং ও ফটোগ্রাফার দুইজন এক্সপার্টের কাছে তদন্তের জন্য হাতের লেখা ও ছবি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কমিটির মিটিং করা হচ্ছে না সদস্যদের এমন অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন- আল আমিনকে আটকের পর যে কমিটি হয়, সেটার একাধিক মিটিং হয়েছে বলে মনে আছে। কিন্তু হোসাইন রাব্বিকে আটকের পর গঠিত তদন্ত কমিটির মিটিং নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। যদিও কমিটির অপর সদস্যরা বৈঠকের বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেছেন। এমনকি তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাবিনা ইসলাম কমিটিতে আছেন কি-না তা নিজেই নিশ্চিত নন বলে গণমাধ্যমে দাবি করেছেন।
ড. বেলায়েত জানান- জালিয়াতি করার সন্দেহে আটককৃত শাবি শিক্ষার্থী আল আমিনের তদন্তের রিপোটর্টি এ সপ্তাহে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু হোসাইন রাব্বির ঘটনায় গঠিত ৭ সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন কবে দেয়া হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। আল আমিন শাবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাবি শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির কর্মী। তাকে স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের নিয়ন্ত্রিত ২১০নং কক্ষ থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে আল আমিনকে বহিষ্কার করা হলেও প্রথমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। মূল হোতাদের বাঁচাতে কেবল ১০ জনের নামে জালালাবাদ থানা পুলিশ মামলা করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দু’জনকে রিমান্ডে নেয়া হলেও আজ পর্যন্ত সেসবের ফলাফল দেখা যায়নি। বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও তদন্তের ফলাফল দেখা যায়নি।