একটি ভয়ঙ্কর সন্ধ্যা ওলট-পালট করে দিয়েছিলো তাঁর জীবন। একটি বছর তিনি ছিলেন যেন অনুভূতিশূন্য, মৃতপ্রায়। তবে এবার তিনি জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়, আপন মহিমায়। সেদিনের সেই সন্ধ্যায় নরপশুদের দেয়া আঘাতকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে তিনি এবার সদর্পে চলতে চান আগের মতো। আবারও শুরু করতে চান লেখাপড়া। বাবার স্বপ্নকে বাস্তব করে হতে চান শিক্ষিকা। সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যারাতে গণধর্ষণের শিকার সেই নারী নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন এতদিন। স্বামী বা পরিবারের সদস্য ছাড়া কারও সামনে যেতেন না, কথাও বলতেন না। নিজেকে আড়াল করে রেখে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতেন সময়। তবে মানবাধিকার সংস্থা, আইনজীবী ও স্বামীর সহায়তায় এখন তিনি আবার নিজেকে গুছিয়ে ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে।
তিনি এবার আগের মতো পড়াশোনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চান। তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বর্বরতাকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখেই আগামীর পথ চলতে চান তিনি। ওই নারীর পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি সৈয়দ আকরাম আল সাহান শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাতে বলেন, ঘটনার পর মাসখানেক শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন মেয়েটি। অসুস্থ অবস্থাতেই আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর নিজেকে অনেকটা আড়ালে নিয়ে যান। এর মধ্যে একদিন বাবার বাড়িতে গিয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের বিড়ম্বনার মুখে পড়েন। সেখান থেকে স্বামীর পরিবারে গিয়েও একই অবস্থার মুখে পড়েছিলেন।
এই অবস্থায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ওই নারী। তাঁর স্বামীর মাধ্যমে খবর পেয়ে মানবাধিকার সংগঠনটি একজন নারী কাউন্সিলরকে মেয়েটির পাশে নিযুক্ত করে। একটানা ছয় মাস নিরবচ্ছিন্ন কাউন্সেলিং করা হয় নির্যাতিতাকে। সৈয়দ আকরাম আল সাহান জানান, প্রথম দফায় কাউন্সেলিংয়ের পর উন্নতি দেখা যায়। আরও তিন মাস কাউন্সেলিং শেষে তিনি যেন নিজেকে ফিরে পান। ওই নারীর বরাত দিয়ে আকরাম আল সাহান বলেন, তিনি চান- যা ঘটেছে, তার কঠিন বিচার হোক। কিন্তু তিনি আর নিজেকে সে ঘটনার মধ্যে আটকে রেখে বসে থাকতে চান না। গত বছর এইচএসসির ফরম পূরণ করতে না পারায় পরীক্ষা দিতে পারেননি। এবার পরীক্ষা দেবেন। মেয়েটি যে কলেজের ছাত্রী ছিলেন, সেই কলেজে যোগাযোগ করে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওই নারীর মামলাটি সৈয়দ আকরাম আল সাহানের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার লিগ্যাল এইড সেলের প্যানেল আইনজীবীরা। আকরাম আল সাহান বলেন, ‘আমি একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বলবো- আমরা ভিকটিম ও মামলার বাদীর পাশে আছি এবং থাকবো। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয় এই পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো শেষ পর্যন্ত তাদের পাশে থেকে। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক- এই দাবি জানাই।’এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর কথা হয় ওই নির্যাতিতার স্বামীর। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার পর আমার স্ত্রী মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়ে। তবে আমি স্বামী হিসেবে নয়, ব ন্ধু হিসেবেই তার পাশে থেকেছি গত একটি বছর।’
তিনি বলেন ‘মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রথমে কয়েক মাস তিনি তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। এখন আমরা দুজন একসঙ্গেই থাকছি আমাদের বাড়িতে এবং আমাদের জীবনে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক ছন্দ। আলহামদুলিল্লাহ- আমরা ভালো আছি।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলা দায়ের ও আসামিরা গ্রেফতারের পর তাদের পক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মহল থেকে আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো। শুধু চাপ সৃষ্টিই নয়, আমাকে বড় অংকের টাকাও অফার করা হয়েছিলো- যাতে আপস-মীমাংসায় বিষয়টা শেষ করি। কিন্তু আমি আমার অবস্থান থেকে সরে যাইনি। প্রথম থেকেই অপরাধীদের সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তি দাবি করে আসছি, এখনও করছি।’ গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে ঘুরতে যান ওই স্বামী। পরে সন্ধ্যায় যান এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে। সন্ধ্যার পরমুহুর্তে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা থামেন। এ সময় কয়েক যুবক ওই স্বামী ও তার স্ত্রীকে ঘিরে ধরে।
এক পর্যায়ে প্রাইভেটকার সহ তাদেরকে জোরপূর্বক জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ৫ম তলা বিল্ডিং এর সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে একে একে ধর্ষণ করে আট নরপশু। তারা দম্পতির সাথে থাকা টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুলও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আটকে রাখে তাদের প্রাইভেটকারও। ঘটনার পর পাগলপ্রায় অবস্থায় ছাত্রাবাস থেকে টিলাগড় পয়েন্টে এসে সেই যুবক পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ আসতে বেশ সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ পেয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ নির্যাতিতাকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করে। ঐ রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামি করে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) শাহপরাণ থানায় মামলা করেন।
চাঞ্চল্যকর সেই মামলায় আসামি করা হয়- সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গির মিয়ার ছেলে শাহ মো মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) মৃত সোনা মিয়ার ছেলে আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের ছেলে মিজবাউল ইসলাম রাজনকে (২৭)। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মামলা দায়েরের পর শাহপরাণ থানাপুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কিংবা সিলেট মহানগর পুলিশ এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে মাঠে নামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯ ও সিলেট রেঞ্জের অধীনস্থ পুলিশ। ঘটনার ৩ দিনের মধ্যে ৮ আসামিকে র্যাব-পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এ দুই বাহিনী। সাইফুর রহমানকে ছাতক থেকে, তারেকুল ইসলাম তারেককে দিরাই থেকে, মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জ সদর থেকে, অর্জুন লস্করকে মাধবপুর থেকে, রবিউল ইসলামকে নবীগঞ্জ থেকে ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে হরিপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় আইনুদ্দিন ও মিসবাহ উদ্দিন রাজনকেও। গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে পর্যায়ক্রমে ৮ আসামি আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়। গৃহবধূকে তুলে নেয়াসহ ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে নিজেদের জবানবন্দিতে
আদালত সূত্রে সর্বশেষ জানা গেছে, ওই ঘটনায় দায়েরকৃত দু’টি মামলা কয়েক মাস আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়। উচ্চ আদালতের আদেশে গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম একই আদালতে এক সাথে চলবে । এজন্যে নতুন করে মামলার অভিযোগও গঠন করা হবে। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি আদালতে এ দুটি মামলার বিচার কাজ একসঙ্গে শুরু করার আবেদন করেছিলেন বাদীপক্ষ। শুনানি শেষে বিচারক আবেদনটি খারিজ করে দেন। এরপরই বাদীপক্ষ মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম একই আদালতে সম্পন্নের জন্য জানুয়ারি মাসেই উচ্চ আদালতে একটি ফৌজদারি বিবিধ মামলা করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ এ মামলার শুনানি করেন । শুনানি শেষে আদালত মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম একসাথে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন।
তার আগে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন, রবিউল, মাসুম , আইনুল ও রাজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য রাজন ঘটনার ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন। গ্রেফতারকৃত এই ৮ আসামিই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। ৮ আসামির মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক ও অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সী ওই নববধূকে গণধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। বর্তমানে ৮ আসামিই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
পরবর্তীতে ৩ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে প্রথম শুনানি হয়। ওই দিন বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় সময় প্রার্থনা করেন। ১০ জানুয়ারি বাদীপক্ষের আইনজীবী অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য আবেদন করে সময় চাইলে আদালত দুই দিনের সময় নির্ধারণ করে দেন। বাদীপক্ষের আবেদনে অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করার জন্য আদালতে জমা দেওয়া বেশ কিছু নথি চাওয়া হয়। অপরদিকে, গণধর্ষণের ঘটনার আগে অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ঘটনার ১ মাস ২৭ দিন পর ২২ নভেম্বর অভিযোগপত্রটি জমা দেয়া হয়। ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনিসহ ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সকলকে আসামী করে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯/১৯এ ধারায় অভিযোগপত্রটি জমা দেয়া হয় ।
গত বছরের ১ ও ৩ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আদালতের আদেশের পর সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার বা ওসিসির মাধ্যমে ৮ আসামির ডিএনএ সংগ্রহ করে ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে প্রেরণ করে পুলিশ। নমুনা সংগ্রহের প্রায় ২ মাস পর ৩০ নভেম্বর আদালতের মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট ডিএনএ রিপোর্ট এসে পৌছে। ডিএনএ রিপোর্টে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর ও মাহবুবুর রহমান রনির ডিএনএ ‘ম্যাচিং’ পাওয়া যায়। এদিকে আইনুদ্দিন ও মিসবাহ উদ্দিন রাজন’র ডিএনএ ‘মিক্সিং’ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
ডিএনএ রিপোর্ট’র ফলে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ৬ জনই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছিল। আইনুদ্দিন ও মিসবাহ ধর্ষণের সময় ‘কিছু ব্যবহার করায়’ ম্যাচিং এর বদলে রিপোর্টে ‘মিক্সিং’ পাওয়া যায়। বাকি ৪ জন কোনো কিছু ব্যবহার না করে সরাসরি ধর্ষণ করেছিল এদিকে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ ও হোস্টেল সুপার জীবন কৃষ্ণ আচার্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২ জুন দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি মো মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদেশে বলা হয় , ‘ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ওই কলেজের অধ্যক্ষও কোনোভাবে ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।’ আইন সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম মো আবুল কাশেম, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেছা ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে ২০ অক্টোবর ১৭৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেন। ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।
এমসি কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে গণধর্ষণের ওই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। সিলেটসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের দাবানল। ঘটনার পর এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল ইসলামকে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এই ৪ জনের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিল করে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২৫ বার