শিক্ষার্থী ১৯ হাজার চিকিত্সক একজন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিয়া। ক্যাম্পাসে এসেছেন ক্লাস করতে। শ্রেণিকক্ষে বসে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাত্ পড়ে যান তিনি। এ সময় তার সহপাঠীরা ধরাধরি করে জবির মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে গেলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হয়, তবে জ্ঞান না ফেরায় কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তখন তার সহপাঠীরা নাফিয়াকে পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে যান ও ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করান। ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনেন ও কিছু ওষুধ লিখে দেন এবং বিশ্রামের পরামর্শ দেন। এ রকম শুধু নাফিয়া নন। জবির প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য উন্নতমানের কোনো চিকিত্সা ব্যবস্থা নেই। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চিকিত্সা সেবার জন্য রয়েছেন ডা. মিতা শবনম নামে মাত্র একজন এমবিবিএস ডাক্তার। আর তাকে সহযোগিতার জন্য রয়েছেন এম. এম. আলমগীর কবীর মেডিক্যাল টেকনিক্যাল অফিসার এবং হালিমা আক্তার সিনিয়র চিকিত্সা সহকারী। জানা যায়, নামেমাত্র মেডিক্যাল সেন্টার রয়েছে জবিতে। যেখানে কোনো রোগের চিকিত্সা মেলা দায়। এখানে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চিকিত্সা সেবা। অভিযোগ রয়েছে মাথাব্যথা, জ্বর ও ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না মেডিক্যাল সেন্টারটিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাথমিক চিকিত্সার জন্য প্রয়োজন এমন অনেক চিকিত্সা সরঞ্জাম মেডিক্যাল সেন্টারটিতে নেই। দুটি বেড রয়েছে, যেখানে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আর দুটি টেবিল রয়েছে যেখানে বসে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন ডাক্তার। তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. মিতা শবনম বলেন, ‘সেন্টারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী চিকিত্সাসেবা নিতে আসেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আমার অফিস। এর মধ্যে একজন চিকিত্সকের পক্ষে এত রোগী দেখা সম্ভব নয়। আমি কর্তৃপক্ষকে চিকিত্সক ও চিকিত্সার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়ানোর জন্য বলেছি। বিষয়টি তারা দেখছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আর চিকিত্সার জন্য এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও নেই, যার কাছে আমি রোগী রেফার করব। তাই বাধ্য হয়েই আমি বাইরের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করি। কোন ধরনের রোগী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিত্সা সেবা নিতে আসেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মিতা শবনম বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেসে থেকে দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়াসহ নানা পেটের পীড়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়, এসব রোগী এখানে সবচেয়ে বেশি আসে। এছাড়া জন্ডিস, বমি, মাথাব্যথা, বিভিন্ন কাটা- ছেঁড়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে মেডিক্যাল সেন্টারে সেবা নিতে আসেন।’
এ ব্যাপারে বাংলা বিভাগের ছাত্র নাঈম বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই মেডিক্যালের সমস্যায় আছি। অনেকদিন আগে শুনেছিলাম ন্যাশনাল মেডিক্যালের সঙ্গে জবি প্রশাসন চুক্তি করবে কিন্তু আজো কোনো ধরনের চুক্তি হয়নি। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত, আমাদের মেসে থাকতে হয়। পুরান ঢাকার অধিকাংশ মেসে আলো বাতাস ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। দূষিত পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের জীবনধারণ করতে হয়। চিকিত্সার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে গেলে সেখানে ভালো চিকিত্সা মিলে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মেডিক্যাল সেন্টারই নয় সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। মেডিক্যাল সেন্টার করার মতো এখানে জায়গা নেই। তবে কেরানীগঞ্জে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গা ক্রয় করেছি সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যা যা দরকার তার সবকিছু করা হবে। ন্যাশনাল মেডিক্যালে জবির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা চিকিত্সা সেবার জন্য চুক্তি করার কথা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে আমরা চুক্তির জন্য কথা বলেছি। তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা এখনো চুক্তির জন্য চেষ্টা করছি।