শ্রমিক সংকট ও সারের দামে বিপাকে হবিগঞ্জের কৃষকরা
–সারের অতিরিক্ত দাম, শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় হবিগঞ্জে বোরো চাষে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন জেলার কৃষকরা। কৃষকদের অনেকেরই দাবি, এবার বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। খরচের এই টাকা উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। তবে জেলা কৃষি অফিস মনে করছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। হবিগঞ্জ কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্য নিধারণ করেছে জেলা কৃষি অফিস। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ করা হচ্ছে আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায়। চাষ হচ্ছে অন্য উপজেলায়ও। তবে শ্রমিক সংকট, মজুরি বৃদ্ধি ও সারের দাম বেশি হওয়ায় বোরো চাষাবাদ নিয়ে বিপাক্ষে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকদের অনেকেই জানিয়েছেন, সম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, এক বিঘা জমিতে ধান চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়, সেই অনুযায়ী টাকা আসে না। আবার বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সময় ধান নষ্ট হয়ে যায়। এবারও আমরা আশঙ্কা করছি, যে অর্থ খরচ হচ্ছে সেই তুলনায় ধানের উৎপাদন আমরা পাবো না। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের কৃষক বাছির মিয়া জানান, জমিতে ধান উৎপাদন করে যে অর্থ পায়, খরচ আরও বেশি হয়। আমরা যেহেতু কৃষক, তাই বাধ্য হয়েই আমাদের এ কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সার ও ডিজেলের দাম বেড়েছে কিন্তু ধানের দাম কিন্তু বাড়েনি। বর্তমানে কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট রয়েছে। অনেকেই কৃষি কাজ করতে চান না। আবার শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের অধিক মজুরি দিতে হয়। আগে যে শ্রমিক ২০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই শ্রমিককে ৪০০-৫০০ টাকায় আনতে হচ্ছে।’বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা গ্রামের কৃষক মুক্তার মিয়া জানান, বর্তমানে কৃষি কাজ করতে গেলে অনেক দাম দিতে হয়। প্রতিটি কাজেই মূল্য বেড়েছে। এখন আর আগের মতো শ্রমিক পাওয়া যায় না। পেলেও মজুরি বেশি হওয়ায় স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে নিয়েই কৃষি কাজ করতে হচ্ছে। কৃষকরা বিনামূলে সার পেলে অনেক কৃষক বাঁচতে পারতো। পাশের মক্রমপুর গ্রামের কৃষক সাদত আলী চৌধুরী জানান, আমরা এখন আর আগের মতো ধান ফলাতে পারছি না। সময় মতো সার দিতে পারছি না। দাম অনেক হওয়ায় জমিতে অল্প পরিমাণে সার দিতে হচ্ছে। বাধ্য হয়েই কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলে আমাদের বাঁচা বড় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। হবিগঞ্জ শহরের সার ব্যবসায়ী ইলিয়াছ মিয়া জানান, বিভিন্ন ধরনের সার সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কোনও কৃষকের কাছ থেকে এক টাকাও বেশি নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘ধানের দাম কিছুটা বাড়ানো গেলে কৃষকরা খরচ উঠিয়ে কিছুটা লাভবান হবে।’