শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ টপকে বাংলাদেশের লিড
হতাশার চাদর ফুড়ে বাংলাদেশকে এই আলো ঝলমলে পথে ফিরিয়ে আনায় সবচেয়ে বড় অবদান ‘ হঠাৎ বদলে যাওয়া’ সাকিবের। এই প্রতিবেদন লেখার সময় তিনি ব্যাট করছেন ৬৮ রানে। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের ৯২ রানের জুটিতে চড়ে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় তিনশ রানের কোটা। ৫ উইকেটে ২১৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ৬ উইকেটে ৩১৬ রান করে। যার অর্থ, তৃতীয় দিনের ২৮ ওভারের প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ তুলে ফেলে ১০২ রান। হারায় একটি মাত্র উইকেট। সেই উইকেটটি অবশ্য অনেক দামী। সুরঙ্গা লাকমলের বলে বোল্ড হয়ে যান বাংলাদেশের বিপদের বন্ধু মুশফিক।
তবে ক্যারিয়ারের ২২তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে এখনো আশার ফুল ফুটিয়ে চলেছেন সাকিব। মুশফিকের বিদায়ের পর সাকিব জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের এই শততম টেস্টেই অভিষেক হওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি ফুটিয়েই মোসাদ্দেক জায়গা করে নিয়েছেন টেস্ট দলে। ময়মনসিংহের ২১ বছর বয়সী তরুণ আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন অভিষেক ইনিংসেই। আত্মবিশ্বাসী সব শট খেলে এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৩৪ রান। সাকিবের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে গড়েছেন ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
সাকিবের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। গত রাতে তার ভালো ঘুম হয়ে থাকবে! নয়তো মাথায় চেপে বসা ভুতটা নামালেন কীভাবে? এমনিতে দল যে অবস্থায়ই থাক, বড় শট তিনি খেলবেনই। তাতে আউট হয়ে গেলেও এতোটুকু অনুশোচনা তার মধ্যে দেখা যায় না। বরং সাফাই গান নিজের খেলার ধরনেরই। কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিনের পড়ন্ত বেলায় তো ব্যাটে হাতে মাঠে নামলেন আরও খেপাটে মেজাজ নিয়ে। ৭ বল আর ৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন বিশাল চাপের মুখে। ঠিক ওই অবস্থায় নেমে সাকিব খেলতে লাগলেন একের পর এক পাগলাটে শট। সেই সাকিবই তৃতীয় দিনে মাঠে নামলেন নিজেকে একেবারে বদলে ফেলে। আরেগ বিকেলে চড়ে বসা ভুতটা যে ঝেড়ে ফেলেই যে তৃতীয় দিন সকালে উইকেটে নামেন, সেটা বোঝা গেল দিনের প্রথম বলেই। লক্ষ্মণ সান্দাকানের করা দিনের প্রথম বলটি সাকিব খেললেন আলতো শটে। ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে অবশ্য চার মেরেছেন। তবে শর্ট কাভার দিয়ে মারা সেই বাউন্ডারিতে মিশে থাকল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া।
শুধু ওই শটেই নয়, এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সাকিব একটাও পাগলাটে শট খেলেননি! বরং সকাল থেকেই তার ব্যাটে আত্মবিশ্বাস আর দায়িত্ববোধের বিচ্ছুরণ! অন্যপ্রান্তে অধিনায়ক মুশফিক ছিলেন বরাবরের মতোই নির্ভরতার প্রতীক। দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠান্ডা মাথায়। কিন্তু ফিফটির পরই সুরঙ্গা লাকমলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ৫২ রান করে। তবে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত মুশফিক খেলছিলেন দারুণ। ৮১ বলের ইনিংসে চার মেরেছেন ৬টি। যার সব কটিই ছিল দৃষ্টিনন্দন শট।
তৃতীয় দিনে সাকিব কতটা মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলে চলেছেন, একটা তথ্যেই সেটা স্পষ্ট। আগের দিন মাত্র ৮ বল খেলেই করেছিলেন ১৮ রান। চার মেরেছিলেন ৩টি। সেই সাকিব তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে চার মেরেছেন মাত্র ২টি! যার প্রথমটা দিনের প্রথম ওভারেই। দ্বিতীয়টা মেরেছেন দিনের ২৬তম ওভারে। মানে মাঝের ২৪ ওভারে কোনো বড় শট খেলেননি সাকিব! বড় শট খেলেননি মধ্যাহ্ন বিরতির পর ফিরে এসেও। ৪১ রানে দাঁড়িয়ে অবশ্য রানআউটের হাত থেকে বেঁচে গেছেন। তবে তারপর থেকেই শান্ত সাকিব। তিনি যত বেশি সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারবেন, ততই বাংলাদেশের জন্য ভালো।