সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে নানাভাবে নানা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি এটা বিশ্বাস করি যে, সততা নিয়ে কাজ করলে পরে আর সেই কাজের সুফলটা যখন জনগণ পায়, সেখানেই হচ্ছে তৃপ্তি, যে না, জনগণের জন্য কিছু করতে পারলাম। আর কেউ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে, অবশ্যই একটা দেশকে উন্নত করা যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, যে যাই বলুক। গতকাল জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেটার প্রশংসা তো দিতেই পারলো না, উল্টো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে কেউ উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কিসে মাননীয় স্পিকার? যদি নৌপথে যেতে হয়, তাহলে নৌকায়ই যেতে হবে।

আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোনো অসুবিধা নাই। আমাদের নৌকা অনেক বড় সবাইকেই নেবো। তবে বেছে নেবো, কেউ নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে, সেটাও দেখবো। তিনি বলেন, মুজিবের বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। ইতিমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেয়া হয়েছে। আরো এক লাখ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনার জবাবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত নৌকায় উঠতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।

রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী বক্তব্যের আগে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলীয় নেতা। এবারের অধিবেশনে একদিনও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরকে দেখা যায়নি। জিএম কাদের করোনা আক্রান্ত হলেও এখন তিনি করোনামুক্ত। সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, এই অধিবেশন করোনার সময়ে চলছে। যার জন্য হয়তো সকল সংসদ সদস্যকে একই সঙ্গে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতার এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাসায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে তিনি জনগণের কথা চিন্তা করে এখানে আসেননি। আমরা তার বক্তৃতা শুনতে পারলাম না এজন্য আমি দুঃখিত, কিন্তু তার ভেতর যে জনগণের প্রতি কল্যাণমূলক চিন্তা তার জন্য তাকে ধন্যবাদ। তিনি আসলে ভালো হতো আমরা তার বক্তব্যও শুনতে পেতাম।

সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ বছর সরকার একটানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হয়েছে। একসময় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাংলাদেশ চলতো। একেকটা দলের একেকটা নীতি আছে। বিএনপি বলেছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অনেক প্রশ্ন তারা করেন, সমালোচনা করেন। আয়নায় মনে হয় ভালো করে চেহারা দেখেন না। আয়না দেখেন নিশ্চয়ই সেটা মেকআপের জন্য। কিন্তু নিজেদের কাজগুলো দেখেন না। তিনি আরো বলেন, সরকার দেশকে নিজ পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছে। সেটা পেরেছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, তাদের মর্যাদা রক্ষা করা, সেবা করা সরকারের দায়িত্ব। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। করোনাভাইরাস বিশ্ব থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত সকলকে মাস্ক পরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা করোনার ভ্যাকসিন নেবেন তাদেরও মাস্ক পরে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভ্যাকসিনের যখন গবেষণা শুরু হয় তখনই আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলাম কারা গবেষণা করছে, আগে থেকে ঠিক করে রাখার। ভ্যাকসিন বাজারে এলেই আমরা কিনবো। এজন্য আমরা এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখি। যখনই বাজারে আসে তখনই ক্রয় করি। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে কথা বলেছিলেন। আসলে করোনা ভ্যাকসিনই সেই সামলোচনার উত্তর দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর খারাপ কোনো রিঅ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। প্রথম কারা করোনা ভ্যাকসিন পাবেন সেটাও আমরা ঠিক করে ফেলেছি। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।

সংসদের অধিবেশন সমাপ্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সফলভাবে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে আমি একটা বড় কারাগারে বন্দি আছি। সংসদ চলার সময় আমি অধিবেশনে আসি, ভালো লাগে। সংসদে এসে সবার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আরো বলেন, এই অধিবেশনে এতো অল্প সময়ের মধ্যে ১৩২ জন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিয়েছেন। কাজেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। করোনাকালে অধিবেশন পরিচালনার জন্য স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারসহ সংশিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn