সুনামগঞ্জঃঃ জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় সেরাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সুনামগঞ্জের চার প্রতিভাবান শিশু। এরা হলো অরিজিৎ ঘোষ চৌধুরী, মহা সেতারা তালুকদার রায়, সেজুতি তরপদার ও তানিয়া আরেফীন চৌধুরী।  শনিবার সকাল থেকে দিনভর জাতীয় শিশু একাডেমিতে প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির দেশব্যাপি আয়োজন ‘শিশুদের কল্যাণে আমরা সবাই’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

মহা সেতারা তালুকদার রায়-  মহা সেতারা তালুকদার রায় দ্বৈত পুরস্কার পেয়েছে। সে দেশাত্মকবোধক সঙ্গীতে প্রথম ও ভাব সঙ্গীতে দ্বিতীয় স্থানের মর্যাদা দখল করেছে। মহা সেতারা তালুকদার রায়’এর গ্রামের বাড়ি মধ্যনগর থানায়। তার বাবা মানদা রঞ্জন তালুকদার দিরাই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরী করেন। মা দ্বিপীকা দাস দিরাই সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। মহা সেতারা তালুকদার রায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভাব সঙ্গীতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এর আগে গত বছর সে ভাবসঙ্গীতে তৃতীয় হয়েছিলো। দিরাই সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মহা সেতারা তালুকদার রায় ২ বছর বয়স থেকেই ওস্তাদ অমিয় রায় অশোক এঁর কাছে গান শিখছে। বাবা মানদা রঞ্জন তালুকদার ও মা দ্বিপীকা দাস সন্তানের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ চেয়েছেন।
সেঁজুতি তরপদার- সেজুতি তরপদার আবৃত্তিতে খ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। তার গ্রামের বাড়ি ছাতক উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। বাবা তপন তরপদার ছাতক ভূমি অফিসে চাকরী করেন। মা জোৎ¯œা সেন পেশায় একজন পোস্টমাস্টার।  সেঁজুতি তরপদার ছাতক বহুমুখী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষকদের কাছে গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা ও নৃত্য চর্চা করছে। পরিবারেই নিয়েছে এসব শিক্ষা, শেখার হাতেখড়ি তার বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের কাছেই। সে গত বছর আন্ত:প্রাথমিক জাতীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০১৮ তে দুটি পুরস্কার পেয়েছিলো। আবৃত্তিতে দ্বিতীয় ও দেশাত্মবোধক গানে তৃতীয় হয়। এই পুরস্কার গত মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে দিয়েছিলেন। সেঁজুতি তরপদার এর বাবা-মা সবার কাছে মেয়ের সাফল্যের জন্য দোয়া-আশীর্বাদ চেয়েছেন।
তানিয়া আফরিন চৌধুরী– তানিয়া আফরিন চৌধুরী ‘বঙ্গবন্ধুকে জানো বাংলাদেশকে জানো’ বিষয়ে গ বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এর আগে গত বছরে একই বিষয়ে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলো সে। এছাড়াও তানিয়া আফরিন চৌধুরী ২০১৮ সালে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী নির্বাচিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক পেয়েছেন। তানিয়া আফরিন চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। তার বাবা আ.ন.ম শোয়েব চৌধুরী দিরাই সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আর মা আমিনা বেগম একজন গৃহিনী। বর্তমানে সে দিরাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তানিয়া আফরিন চৌধুরী’র বড় তিন ভাই। তার বড় ভাইদের কাছ থেকে বক্তৃতা, বিতর্কের বিষয়ে ধারণা নেয় সে । সেরাদের সেরা হওয়ার জন্য সবসময় উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছেন বড় ভাইসহ পরিবারের সদস্যরাই। তানিয়া আফরিন চৌধুর’র বড় ভাই তাসলিম আহমেদ চৌধুরী জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতা-২০১৭ তে ‘বঙ্গবন্ধুকে জানো বাংলাদেশকে জানো’ বিষয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলো। তার বাবা-মা দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
অরিজিৎ ঘোষ চৌধুরী–
জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতা-২০১৯’এর তবলায় গ বিভাগ থেকে ১ম স্থান (স্বর্ণপদক) অধিকার করেছে সুনামগঞ্জের শিশু শিল্পী অরিজিৎ ঘোষ চৌধুরী।  অরিজিৎ সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরের (বাড়ি নম্বর উপত্যকা-৩০) সাংস্কৃতিক সংগঠক অ্যাডভোকেট অমিয়াংশু ঘোষ চৌধুরী ও নৃত্যশিল্পী শ্রাবন্তী পুরকায়স্থ’ বড় ছেলে এবং অমলেন্দু ঘোষ চৌধুরী ও সুদিপ্তা ঘোষ চৌধুরী’র নাতি। অরিজিৎ ঘোষ চোধুরী এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তবলায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করলো। এর আগে ২০১৫ সালে ক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে সে ২য় স্থান অধিকার করেছিল। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অরিজিৎ ১৯ মাস বয়স থেকেই তবলার চর্চা করছে।  অরিজিৎ জানালো, ছোট পিসি সংগীতশিল্পী তুলিকা ঘোষ চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় তবলার সাথে তার পথচলা। তবলায় হাতেখড়ি সুনামগঞ্জের স্পন্দন সংগীত বিদ্যালয়ের ওস্তাদ বাবুল আচায্যের্র হাত ধরে। এরপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ওস্তাদ পিনু সেন দাস’এর কাছে নিয়মিত তালিম নিচ্ছে সে। অরিজিৎ সকলের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছে। সুনামগঞ্জের এসব প্রতিভাবান শিশু শিল্পীদের অভিনন্দন জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানালেন, সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে থাকা সুনামগঞ্জের শিশু শিল্পীরা ভবিষ্যতে জাতীয়ভাবে যাতে আরো ভাল করে, সেভাবেই সুনামগঞ্জ জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীসহ সকল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কাজ করে সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।-সূত্র সুনামগঞ্জের খবর।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn