সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং সেটির পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির লেখার কিছু অংশ নিয়ে সরকার ও সরকারি দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনকি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে। তবে এই সংকট নিরসনের পথ খুঁজতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক হলেও কোনো ফলাফল আসেনি। বরং পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়েছে। ফলে সমাধান দেখতে পুরো দেশ এখন বঙ্গভবনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

তবে সমাধানের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হবে যেকোনো সময়ে। বঙ্গভবনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। বৈঠকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনা যে হবে তা নিশ্চিত। বঙ্গভবনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বৈঠকের প্রস্তুতির কথা পূর্বপশ্চিমের কাছে স্বীকার করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সাংবিধানিক পদের ব্যক্তি বা কর্মকর্তাকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

গত ৩ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সর্বসম্মত রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল এবং অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের ফলে, ৭২ এর সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদে থাকার যে বিধান বর্তমান সংসদ প্রতিস্থাপন করেছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। এর স্থলে সামরিক শাসনামলে করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানকে পুন:স্থাপিত করা হয়। রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আদালতের বারান্দা থেকে এই রায় রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি নেতারা রায়কে ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।অন্যদিকে এই রায়কে গ্রহণ করতে পারে নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রায় সব মন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। আইনমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে রায়কে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।

১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পরই সবার চোখ বঙ্গভবনের দিকে ছিল। বঙ্গভবনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের অসংগতি এবং প্রধান বিচারপতিরঅসদাচারণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বঙ্গভবন এই বৈঠকের আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রপতি কী করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn