সরকারে বিতর্কিত এবং ব্যর্থমন্ত্রীদের তালিকাভুক্ত হতে পারেন এই পাঁচ মন্ত্রী * প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত স্পষ্টবাদী একজন মানুষ। তিনি যা বিশ্বাস করেন, তা অকপটে বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, তিনি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পড়েন না। এ দুটি পত্রিকা পড়ার রুচি তার নেই। জাতীয় সংসদে অন্তত দুবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা বিশ্বাস করেই বলেন। এ কারণেই গণভবনে বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার রাখা হয় না। এর কারণ অত্যন্ত যৌক্তিক।

এই প্রথম আলো-ডেইলি স্টার ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় দিতে চেয়েছিল। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান স্বনামে লিখেছিলেন, দুই নেত্রীকে সরে যেতেই হবে। শুধু তাই নয়, প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের একমাত্র কাজ হলো ছিদ্রান্বেষণের চেষ্টা করা এবং বিরাজনীতিকরণ কে উস্কে দেওয়া। এ দুটি পত্রিকার সরকারের ভালো কাজ, অগ্রগতি, অগ্রযাত্রা, কোন কিছুই দেখে না। বরং যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে সমালোচনা করাই এদের প্রধান লক্ষ্য।  এ ‍দুটি পত্রিকা সব সময় বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়াকে উস্কে দিতে চায় এবং বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে একটি সুশীল আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হয়। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো জনগণের ক্ষমতায়ণ।

এই দুই বিরোধের কারণেই প্রথম আলো, ডেইলি স্টার গ্রুপ সবসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ। এই দুটি পত্রিকার মধ্যে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল  পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু তে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রীতি সম্মেলন। যেই পত্রিকা প্রধানমন্ত্রী পড়েন না, যেই পত্রিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চায়, যে পত্রিকা রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণের জন্য অহনিশ ব্যস্ত, সেই পত্রিকার প্রীতি সম্মেলনে পাঁচ মন্ত্রী যোগ দিলেন।

প্রধানমন্ত্রী কি বলেন আর মন্ত্রীরা কি করেন! যে পাঁচ মন্ত্রী এই প্রীতি সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজেদেরকে ধন্য করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

যে পাঁচজন মন্ত্রী যোগ দিয়েছিলেন, সেই পাঁচজন মন্ত্রী নানা কারণে সরকারে বিতর্কিত এবং ব্যর্থমন্ত্রীদের তালিকাভুক্ত হতে পারেন অবলীলায়।  সাধারণ মানুষ মনে করেন, যারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি তাদের মধ্যে অন্যতম এই পাঁচজন মন্ত্রী। এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন সবচেয়ে সিনিয়র মন্ত্রী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের তালিকা, রাজাকারের তালিকা নিয়ে যে বিভ্রাট করেছেন, সেই বিভ্রাটের খবর প্রথম আলোতেই প্রকাশ করা হয়েছিল।

আবার হেলেনা জাহাঙ্গীরের গ্রেফতারের পর হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে রাখার প্রস্তাবক তিনি ছিলেন বলেও মেহের আফরোজ চুমকি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এরকম নিজের মন্ত্রণালয়ের যখন তিনি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন না, তখন প্রথম আলোতে গিয়ে তিনি ধন্য হল কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি।  আরেক মন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুরু থেকেই পেঁয়াজ কেলেঙ্কারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নানা বিষয়ে বিতর্কিত। এমনকি তিনি নিজেই বলেন যে, পেঁয়াজ নিয়েই নাকি তিনি সংকটে পড়েন সব সময়। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতেও তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই কি তিনি প্রথম আলোতে গিয়ে ধরনা দিলেন? ড. আব্দুল মোমেনের আমলে বাংলাদেশে পাকিস্তানি এক আবহ তৈরি হয়েছে। নয় নভেম্বর পাকিস্তানে হয়ে গেল তথাকথিত বন্ধুত্ব সম্মেলন। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন ক্ষেত্রে সফল সেই হিসেব জনগণই ভাল বলতে পারেন।

ড. আব্দুল মোমেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও নিজে দাবি করেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। এ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সেই ড. আব্দুল মোমেনও প্রথম আলোর প্রীতি সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজেকে ধন্য করেছিলেন।  পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নানা কারণে বিতর্কিত। তিনি ফেরাউনের আমলে আমলাতন্ত্র ছিল বলে বিতর্কিত হয়েছিলেন। মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনার পর তিনি বিভিন্নভাবে আলোচনায় আসেন। আর এই মন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সিএসপি। তাদেরকে বলা হতো রাজাকার ব্যাচ। এই চার মন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নসরুল হামিদ। যিনি প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডিজেলের দাম বাড়িয়ে সরকারকে যারা বিব্রত করেছেন তাদের শিরোমণি হিসেবে  নসরুল হামিদ আলোচিত। যদিও প্রধানমন্ত্রী এই ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিকে সমর্থন করেছেন।

এটি প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা এবং সরকারপ্রধান কিভাবে সরকারি সিদ্ধান্তকে ডিফেন্ড করতে হয় তার একটি উদাহরণ। কিন্তু এই কাজটি যে সরকার এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা নিয়ে কারোই কোনো দ্বিমত নেই। এই পাঁচ মন্ত্রীর প্রথম আলোতে যাওয়া কি নিছকই যাওয়া? প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিষ্ঠানটিকে অপছন্দ করেন, সেই প্রতিষ্ঠানে প্রীতিভোজে অংশ নিয়ে করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে হাতে হাত মিলিয়ে কর্মদান করে কি বার্তা দিলেন এই পাঁচ মন্ত্রী? এদের এই প্রথম আলো প্রেম কি অন্যকিছুর ইঙ্গিত করে?

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn