কুমিল্লায় দুর্গামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় গত ১৪ অক্টোবর মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক একটি মিছিল করা হয়। স্থানীয় তারাপাশা বাজারে ছাত্রসেনার ব্যানারে এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজমুল হক সেলিম। সাম্প্রদায়িক মিছিলে নেতৃত্বদানকারী এই ব্যক্তিকে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেলিমের বিরুদ্ধে ছাত্রশিবির ও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। যদিও এখন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।
এই ইউনিয়নে দুই দফা নাম পরিবর্তন করে সেলিমকে মনোনয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। কামারচাক ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তিনি। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে গত ২৩ নভেম্বর মনোনয়ন প্রদান করা হয় বর্তমান চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিমকে। পরবর্তীতে ২৪ নভেম্বর তাকে পরিবর্তন করে মনোনয়ন দেওয়া হয় আতাউর রহমানকে। ২৫ নভেম্বর আবারও প্রার্থী পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ। ফের দলীয় মনোনয়ন পান নজমুল হক সেলিম।
নজমুল হক সেলিম ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বাবা সুন্দর আলী ও চাচা ফয়জুর হক সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। ২০০১ সালে তিনি বিএনপির সরাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এসময় তিনি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে সাবেক এমপি এম নাসের রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশও নেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দল পাল্টান সেলিম। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বদান্যতায় পদও বাগিয়ে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জামায়াত নেতা জানান, সেলিম ছোটবেলা থেকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরপর ২০০১ সালে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তবে সবসময় জামায়াতকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন। ওই জামায়াত নেতা দাবি করেন, সেলিম আওয়ামী লীগ করলেও স্থানীয় জামায়াতের অভিভাবক। রাজনগর থানায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
রাজনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপূজা চলাকালীন কুমিল্লার একটি মণ্ডপে কোরআন শরিফ অবমাননার কথিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজারে গত ১৪ অক্টোবর বেলা সোয়া ২টায় উপজেলা ছাত্রসেনার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম। এঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার বরাবরে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
এই প্রতিবেদনে সেলিমের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক মিছিল বের করার কথা উল্লেখ করেন ওসি। তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা স্বীকার করে রাজনগর থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা তদন্তাধীন আছে। কামারচাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল মন্নাফ বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই নজমুল হক সেলিম ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তিনি উপজেলা শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক পদেও ছিলেন। আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় তিনি গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু তার জামায়াতপ্রীতি এখনো যায়নি।
তিনি আরও বলেন, এবারে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গা উৎসবের সময় কুমিল্লার ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন নজমুল হক সেলিম। মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রব বলেন, ছোটবেলা থেকে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নামধারী সেলিম সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমানের ইশারায় আমাকে অনেকবার হুমকিও দিয়েছিল।
নজমুল হক সেলিম আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ বলে জানান তিনি।এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নজমুল হক সেলিমের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি। আগামী ২৬ ডিসেম্বর এ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৯০ বার