সময় বদলায়, মানুষের মনও নাকি বদলায় তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, আসলেই কি তাই……

তন্দ্রা রয়-

ছেলেটি সবে মাত্র তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছে, উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত যুবক, চোখ খুঁজে বেড়ায় হরিনী চোখ… গল্পটা যে সময়কার তখন একটি  অপরিচিত ছেলে আর মেয়েতে দেখা হওয়া কথা হওয়া প্রায় অসম্ভব কাজ ছিলো। এখনকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ কত সহজে একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারে, তখনকার সময় একমাত্র কোন সামাজিক অনুষ্ঠানই ছিলো অপরিচিত কারও সাথে পরিচিত হবার প্রধান মাধ্যম। বিশেষ করে প্রেমের ক্ষেত্রে…।

যাই হোক ছেলেটা হঠাৎ করেই প্রেমে পড়ে সুরভী নামের এক মেয়ের যাকে সে এক বিয়ে বাড়িতে প্রথম দেখে, কথা হয় না শুধুই চোখের দেখা… বিয়ে শেষ শুধু নাম আর বাসা মিরপুর এইটুকু সম্বল….। ছেলেটা কি করবে ভেবে পায় না। না পেরে বন্ধুদের প্রস্তাব করে চল খুঁজতে মিরপুর যাই। বন্ধুরা হাসাহাসি করে তাকে নিয়ে মাথা নষ্ট এতো বড় মিরপুরে কোথায় খুঁজবো তাকে? ছেলেটি নাছোড়বান্দা… বন্ধুরা বাধ্য হয় সাহায্যর হাত বাড়াতে….। প্রায় একমাস মিরপুরের সকল স্কুলের সামনে সাঁড়াশি অভিযান চলানোর পর ছেলেটা মেয়েটাকে ঠিক খুঁজে পায় এবং  মেয়েটার সাথে প্রেম করতে সমর্থ হয়।

কথা বলার জন্য নিজের পকেটমানি বাঁচিয়ে মেয়েটাকে মোবাইল কিনে দেয়। কতটা আবেগ কতটা ভালোবাসা থাকলে একজন মানুষ ভালোবাসাকে এভাবে খোঁজে? কিন্তু শেষ পরিণতিটা…  তার কিনে দেয়া মোবাইল মার কাছে ধরা পড়ার বাহানা করে সিম চেঞ্জ করে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম চালায় মেয়েটি। ছেলেটা জানতে পারে পেরেও কিছুদিন নিশ্চুপ থাকে আশা যদি বদলায় না। মেয়েটি মিথ্যা থেকে পারেনি বের হয়ে আসতে। ছেলেটা তাই নিজেই সরে আসে নিরবে।

আজ তার সবই আছে ঘরে লক্ষ্মী বউ… আদরের সন্তান… ভরপুর সংসার। সে সুখী মানুষ… কিন্তু সেই বিস্বাসঘাতকতা আজও পোড়ায় তাকে…. নীরবে। এই সেদিনও যখন আমরা মিরপুর এক অনুষ্ঠানে গেলাম কাকতালীয়ভাবে সেই রেস্টুরেন্টটা ছিলো সেই এলাকায় যেখানে তার দেখা করতো কখনও সখনও…. গাড়ির জানালা দিয়ে ছেলেটা কি উৎসাহ নিয়ে আমাকে সেই জায়গাগুলো, রাস্তাগুলো দেখাচ্ছিলো, আমি মুগ্ধ হয়ে তার চোখের সেই আবেগ দেখেছি….।

মেয়েটাকে খুঁজে পেতে তাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে একটা মাস, কতটা আবেগ থাকলে কেউ তা করতে পারে, সময়টা এখন হলে মেয়েটাকে খুঁজে পেতে বড়জোড় এক ঘন্টা লাগতো…. fb তে…আর আবেগটাও স্থায়ী হয় ঐ রকমই…. । আমি একে যেমন জানি তেমনি এমন ছেলেকেও জানি যে একই সাথে একাধিক মেয়ের সাথে প্রেম করে যাচ্ছেন…. একই গতিতে থাক তার কথা অন্যদিন বলবো….।

যা বলছিলাম কিছু কিছু মানুষের কাছে আবেগ ভালোবাসা বহু মূল্যবান যা সে যত্নে রাখে স্মৃতির ভাঁজে, শত সময়ের ঝড়েও ধুলা জমতে দেয় না তাতে। যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই পারস্পরিক বিস্বাস সম্মান থাকতে হয় নয়তো সেটা কোন সম্পর্কের নাম হয় না। ছেলেটা মেয়েটাকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো এটা তার দুর্বলতা নয় উদারতা। মেয়েটি তার দুর্বলতা ভাবে তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে, ছেলেটা বুঝেও চুপ করেছিলো সে মেয়েটাকে সত্যিকারের ভালোবাসে বলে, নির্বোধ মেয়ে সেটাকে নিয়ে কটাক্ষ করে। আজ সে টের পায় সে কি ভুল করেছে কিন্তু সংশোধনটা সময়মত না করলে পস্তাতে তো হবেই।

ভালোবাসার পোড়া জায়গাগুলো আসলে এমনি যতই মলম লাগানো চিনচিন ব্যাথাটা থেকেই যায়…. যদি কাউকে ভালো নাই বাসে কি দরকার তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির? কি লাভ শুধু মাত্র সময় কাটানোর জন্য কাউকে এই নির্মম আঘাত করার…….  খেলা….  কে জানে কবে তুমি নিজেই না এমন খেলনা হও অন্য কারও হাতে। যেমন হয়েছিল এই মেয়েটি…….. তখন ফিরতে চাইলেও কেউ নেবে না তোমায়, কারণ তোমার দুমুখোপনা যে ভয় ছড়িয়ে গেছে আত্মায়..

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn