বিশেষ প্রতিনিধি:দীর্ঘ বিরতির পর সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে আবারো রাজপথে নামছে বিএনপি। আগামী মাস থেকেই ইস্যুভিত্তিক সিরিজ এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করা হলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখা ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপ বাড়াতেই দেশব্যাপী এসব ইস্যুভিত্তিক গণসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রোববার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা নীতিনির্ধারণী ফেরামে আলোচনা করেছি। সেখানে দেশের যে অবস্থা তা বিবেচনায় নিয়ে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করা হলে জনগণকে সঙ্গে তা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। ওই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি শুরু থেকেই ভারতের সঙ্গে যে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য  জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, গুম, নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি, জঙ্গি হামলা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মতো জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতেও কর্মসূচি দেয়া হবে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ এবং সম্প্রতি দেশে একাধিক জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের নীতি নির্ধারণ ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেন। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির অধিকাংশ স্থায়ী কমিটির সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়া দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করে ইস্যুভিত্তিক সিরিজ কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই বৈঠকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির জয়লাভের বিষয়টিও উঠে আসে। আলোচনা হয়েছে- চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নূরু হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও। নূরু হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও আলাদা কর্মসূচি দেয়ার কথাও উঠেছে। একটি সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ও ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যেসব চুক্তি হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পক্ষেই স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মত দিয়েছেন। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর সফর মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকেও মাঠে নামার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এর একদিন আগে বিএনপি পন্থী বেশকয়েজন সাংবাদিক নেতার সঙ্গে বৈঠকেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামীতে একটি জাতীয় নির্বাচন, সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী যে কোনো চুক্তির বিষয়ে তার কঠোর মনোভাবের কথা তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার আন্দোলন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলেও স্বীকার করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এবার আর কোনো ধরনের ভুল করার সুযোগ নেই। দেশকে রক্ষা করতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খুব শিগগিরই দল গুছিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করব। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। এদিকে চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, আগামীতে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জনমত গঠনে দেশব্যাপী গণসংযোগে করবেন। খুব শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপার্সনের এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn