ইরাক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের হামলায় ৩০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তারা হাসসাকেহ প্রদেশের শাদ্দাদি শহরের কাছাকাছি রাজম আল-সালিবিতে সিরীয় ও ইরাকি শরণার্থীদের জন্য নির্মিত একটি অস্থায়ী আবাসস্থল লক্ষ্য করে এ হামলা চালায়। সেই সাথে একটি চেকপয়েন্টে অবস্থানরত সিরিয়ার ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। আইএস বলেছে শাদ্দাদিতে “স্বধর্মত্যাগী”দের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। জিহাদি গোষ্ঠীটি উত্তর সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রতিবেশী ইরাক সরকার সমর্থিত এসডিএফ’র কুর্দি ও আরব যোদ্ধাদের চাপের সম্মুখীনে আছে। এসডিএফ হাসসাকেহের বেশিরভাগ অংশে আইএস জঙ্গিদের দমন করেছে এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইউফ্রেটিস নদী উপত্যকা শহর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে। এবং ২০১৪ সালে ইরাকের শহর মোসুল পতনের পর আইএস দ্বারা ঘোষিত “খিলাফত”র প্রকৃত রাজধানী রাক্কা শহর পুনরায় উদ্ধারে আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করবে।

সিরিয়া যুদ্ধ পর্যবেক্ষণে থাকা যুক্তরাজ্যকেন্দ্রিক একটি মানবাধিকার সংস্থা জানায়, মঙ্গলবার সকালের দিকে শাদ্দাদির পূর্বে রাজম আল-সালিবি এলাকায় ক্যাম্পের বাইরে এবং ভিতরে অন্তত পাঁচ জন আইএস জঙ্গি এ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। বোমা হামলা ও পরবর্তী সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হয়, এদের মধ্যে ২৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং আহত হয় অন্তত ৩০ জন। সিরিয়ার সরকারী সংবাদ সংস্থা সানা নিউজ এজেন্সি সূত্রে, ৩০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৪ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারা এটা আত্মঘাতী বোমা হামলা ছিল কিনা সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেনি। এসডিএফ যোদ্ধারা হাশেখ শহরে হাসপাতালগুলিতে আহত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। সানা কর্তৃক প্রদত্ত চিকিৎসা সূত্রে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এসডিএফ যোদ্ধারা আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে বলে সানা সূত্রে জানা যায়। ইরাকি সেনাবাহিনীর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ক্যাম্পে হামলার সময় জঙ্গিরা কয়েক ডজন নাগরিককে অপহরণ করেছে। যদিও রিপোর্টটি যাচাই করা সম্ভব ছিল না তবে ইরাকি সংসদের মানবাধিকার কমিটির প্রধান বৈরুত ভিত্তিক আল-মায়াদিন টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকারে একই ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং সানা আহতদের কয়েকজনকে উদ্ধৃত করে বলে যে, তারা কয়েক ডজন তাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ হারিয়েছে।

হামলার সময় প্রায় ৩০০ পরিবার রাজিম আল-সালিবিতে জড়ো হয়েছিল, স্বল্প আবাস ও কোলাহলপূর্ণ এ ক্যাম্পে প্রবেশে এসডিএফ’র অনুমতি ও নিবন্ধনের জন্য। সেখানে ছিল সিরিয়ার রিক্কা এবং দেইর আল-জওর প্রদেশ থেকে এবং গত অক্টোবরের পর থেকে মোসুল থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে আসা কয়েক হাজার ইরাকী নাগরিক দ্য চ্যারিটি সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, আক্রমণের ফলে প্রায় ৪০০ জনকে রাজিম আল সালিবি থেকে আল-হাওয়ালে অন্য এক শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। “উদ্বাস্তু এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য শরনার্থী শিবিরগুলি যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়ণ থেকে পালিয়ে আসা মানুষের আশ্রয়,” সংগঠনটির সিরিয়া দেশের পরিচালক সোনিয়া খুশ বলেন। “সংঘাতের জন্য সকল দলকে নিশ্চিত করতে হবে যে শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্মিত শিবিরগুলো হচ্ছে মানুষের আশ্রয়ের জায়গা, এখানে কোন যুদ্ধ নয়।” সূত্র : বিবিসি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn