সিলেটে বেড়েই চলেছে করোনায় মৃত্যুর মিছিল। গতকাল করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫শ’ ছাড়িয়ে গেল। গত ১৫ মাসের মধ্যে গতকাল একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। এদিন মারা গেছেন ৯ জন। উপসর্গ নিয়ে অন্তত আরো ১০ জন মারা গেছেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৭ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে। এ নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ।
নতুন করে সিলেটে আইসিইউ সংকট দেখা দেয়ার কারণে মৃত্যুর এই মিছিল থামছে না। সিলেট বিভাগে এই মিছিলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন সিলেট জেলার মানুষ। মোট ৪০৭ জন সিলেটেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেটের সাবেক মেয়র মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ হকসহ অনেকেই। সিলেট বিভাগের অপর ৩ জেলায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানের চেয়ে সিলেটের সংখ্যা চারগুণ বেশি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জে ৩৫, হবিগঞ্জে ২২ এবং মৌলভীবাজারে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, মৃত্যুর মতো শনাক্তের হিসাবও বেড়ে চলেছে।
সিলেট বিভাগে গতকালও নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৬২ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- সিলেটের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪৯২ জন। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৪৪, সুনামগঞ্জে ২৩, হবিগঞ্জে ৭ ও মৌলভীবাজারে ১৮ জন ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে রোগী ভর্তির জায়গাও সংকুচিত হয়ে আসছে। গতকাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, করোনা ডেডিকেটেড এ হাসপাতালে মোট বেড রয়েছে ১০০টি। সর্বমোট রোগী ছিলেন ১১০ জন। এর মধ্যে শনাক্ত হলেও আশঙ্কামুক্ত এ ধরনের ৭ জন রোগীকে বাড়িতে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। আর অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হওয়ার কারণে ১০৩ জনকে হাসপাতালে রাখতে হয়েছে।
তিনি জানান, এখন আর রোগী ভর্তির জায়গা না থাকায় শামসুদ্দিনে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এদিকে, শামসুদ্দিন হাসপাতালের বাইরে গতকাল ছিল এম্বুলেন্সের ভিড়। রোগী নিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর এম্বুলেন্স আসছিল হাপসাতালের ফটকে। কিন্তু রোগী ভর্তির জায়গা না থাকায় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আইসিইউর জন্য অনেকেই হাসপাতালে আসছেন। স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে গত ১৫ মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৭১৬ জন। এর মধ্যে সিলেটে ১৮ হাজার ২৭৬, সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ১৫৭, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৯৫১ ও মৌলভীবাজারে ৩ হাজার ৩৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগে এ পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৩৪২ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১৬ হাজার ৬১৬, সুনামগঞ্জের ২ হাজার ৮৫৮, হবিগঞ্জের ২ হাজার ১১৮ ও মৌলভীবাজারের ২ হাজার ৭৫০। স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সিলেটে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি। ফলে পরিস্থিতি অবনতি হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা দিতে পারে।
এ কারণে মানুষের মৃত্যুর মিছিল ঠেকানোই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো কৌশল। তারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির এই পিক টাইমে সিলেটে শুরু হচ্ছে টিকা কার্যক্রম। ইতিমধ্যে টিকা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের এক পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে। এতে করে কিছুটা হলেও মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। তবে, গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সিলেটে ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া ফ্রন্টলাইনার হিসেবে বিবেচিত পেশাজীবীদেরও টিকা দেয়া হচ্ছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল ও পুলিশ লাইন হাসপাতাল এ দুই কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম চলছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৮৬ বার