সিলেটে বন্যায় প্লাবিত ৪ উপজেলা : ত্রাণের অপেক্ষা
শামীম আহমেদ-
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলোর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। তারা খাদ্যের জন্য হাহাকার করছেন। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ দোকান পাঠ ও বাড়ি-ঘর। সিলেট-বারইগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক ও বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর অভ্যন্তরিণ সড়কটি। সড়কটির উপর প্রায় কমর পানি হওয়ার কারনে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়কে যান আটকা পড়ায় যাত্রিরা পায়ে হেঁটে কিংবা ট্রেক্টরে করে কবলিত এলাকা পারাপার হতে দেখা গেছে।পানি বন্ধি মানুষদের মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যেই জুটছে না সরকারি সহায়তা। পাচ্ছেন না চাল, টাকা কিছুই।
জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও বিয়ানীবাজার উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বিয়ানীবাজার পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশুও নিরাপদ স্থানে সরাচ্ছেন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল সিলেটের সাথে বিয়ানীবাজারের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে দুই পয়েন্ট কমে বিপদ সীমার ২১ পয়েন্টের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের আরও বেশ কিছু অংশ তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে সিলেটের সাথে যোগাযোগের বিকল্প সড়ক বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের আশি ভাগ অংশ। সরেজমিন বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া, লাউতা, মুড়িয়া ও বিয়ানীবাজার পৌরসভার ৮০ভাগ এলাকার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন। এসব ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করা মানুষজন আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশুগুলো উচু স্থানসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিয়ে রাখা হচ্ছে। খাড়াভরা এলাকার বন্যা কবলিত শফিক উদ্দিন বলেন, নদীর পানি তোড়ের ঘর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
বন্যায় উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও পৌররসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুবাগ, শেওলা, লাউতা ও তিলপাড়া ইউনিয়নের অধিবাসীরা। এদিকে, গতকাল শুক্রবার সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহসড়কের যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। দূরপাল্লার বাস ও মাল বোঝাই ট্রাক সীমিত আকারে চলাচল করেছে। সড়কের বেশ কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়া অটোরিক্সা, মাইক্রো চলাচল করেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রি। সড়কের ডুবে যাওয়া অংশ মানুষজন টেক্ট্রর ও পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে দেখা গেছে। গোলাপগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামপুর ও চন্দরপুর বাজার। এছাড়া, জকিগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষও পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
ফেঞ্চুগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। প্লাবিত অঞ্চল ছাড়াও পানিবন্দী কয়েক হাজার মানুষ। যাদের বসতঘরে পানি ঢুকেছে তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। পূর্ব বাজারের রাস্তায় বুকসমান পানি। কাঁচা বাজার, মাছের বাজার বন্ধপ্রায়। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখা না গেলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটের সাথে পণ্যমূল্য বাড়বে।