আকাশ চৌধুরী :: ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পর চতুর্থ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে সিলেটে। এখন পর্যন্ত অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হলেও আশা করা হচ্ছে দেড় বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো নিয়ে চালু হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির পাশাপাশি চিকিৎসা গবেষণাতেও নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দেবে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজই একমাত্র ভরসা। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে এক হাজার শয্যার আরেকটি হাসপাতালও পাবে সিলেটবাসী।  প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী জানান, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে শুধু সিলেটই নয়, দেশেই স্বাস্থ্যসেবায় অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে।  তিনি জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। তিনি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পর সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। মাস তিনেক আগে এই বিল পাস হয়। তবে বলা যায়, এখন পর্যন্ত এটি প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।

ঢাকার পিজি হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর শুরু হয়। এক্ষেত্রে নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ এ তিনটি সম্পূর্ণভাবেই নতুন অবকাঠামো নিয়ে স্থাপিত হবে। ভৌত অবকাঠামো ও জনবল মিলিয়ে থাকছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী জানান, চৌহাট্টায় অস্থায়ী কার্যালয়ে কয়েক জনবল নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। খুব দ্রুতই মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও হেলথ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবে। তারাও এ ব্যাপারে আগ্রহী। এরপর আসে শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপার। এটি এ বছর চালু করা যায়নি। কারণ বিদেশি শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে গেছে। তবে আগামী বছর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনই নতুন শিক্ষার্থী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।  জমি অধিভুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একান্ত আগ্রহে এ কাজটি দ্রুততর সময়ে হচ্ছে। বর্তমানে তারই ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ সুরমায় হোক। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও দক্ষিণ সুরমায় দুটি স্পট ভিজিট করে গেছেন। এখন জায়গা চূড়ান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য রয়েছে।

জমি অধিগ্রহণ একটি জটিল প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দু’বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। তবে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেড় বছরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করবে বলে আশা করছি। কারণ এখন পর্যন্ত যেসব জায়গা দেখা হয়েছে, সেখানকার মানুষ জমি দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। মেডিকেল সংশ্লিষ্ট হয়েও অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতদিন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সনদ গ্রহণ করতেন। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী যে রূপরেখা দিয়েছেন, এতে এসব প্রতিষ্ঠান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসবে। এতে স্বাস্থ্যশিক্ষার মানের যেমন অনেক উন্নয়ন ঘটবে, তেমনি দেশেই চিকিৎসা গবেষণার জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। চিকিৎসকরা তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের জন্য যে সেবাটি দেবেন, সেটি সিলেটবাসীর জন্য হবে বাড়তি পাওনা। একই সঙ্গে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল হলে নিঃসন্দেহে সিলেটের মানুষ আরও ভালো চিকিৎসাসেবা পাবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn