ওয়েছ খছর-প্রায় এক মাস আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে; নগরে ওয়ার্ড বাড়ছে ১২টি। সীমানা বাড়ানোর কারণে সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা এলাকার শহরতলীর এলাকা থেকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সিটি নির্বাচনের বাকি এখনো এক বছরের মতো। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এখন থেকেই মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ঘরানার চার প্রার্থী। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন নতুন এলাকা। বর্তমানে ওয়ার্ড ২৭টি।

এর সঙ্গে ১২টি সংযুক্ত হয়ে নতুন ওয়ার্ড হবে ৩৯টি। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের আপত্তি গ্রহণ ও শুনানি চলছে। সিটি করপোরেশনের  মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, আপত্তি শুনানি চূড়ান্ত করার পর নতুন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে সিলেট নগরের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবে বিশাল এলাকা। তিনি জানান, যেসব এলাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এগুলো নগর এলাকাই। কিন্তু এতদিন তারা নগরের সুবিধাবঞ্চিত ছিল। নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের সুবিধা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এদিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নতুন যে ১২টি ওয়ার্ডের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে খুব বেশি ওলটপালট হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত হয়ে গেছে কোন ওয়ার্ডে কোন এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে এবার খুব বেশি আগ্রহ আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট নগর মসনদ গত ৯ বছর ধরে আওয়ামী লীগের জন্য অধরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এখানে মেয়র হচ্ছেন বিএনপি’র। ফলে আওয়ামী লীগ এবার মেয়র নির্বাচনে শক্তি সঞ্চয় করেই নামার আভাস দিয়েছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শুক্রবার এলেই নতুন নতুন এলাকায় সিটি নির্বাচনের আমেজ পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসতে থাকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ছবি। নতুন নতুন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা গিয়ে গণসংযোগ করার কারণে এখন থেকেই বিশেষ করে শহরতলীতে ছড়িয়ে পড়ছে ভোটের আমেজ। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাবেক মেয়রপুত্র মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ প্রায় প্রতি শুক্রবারই নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া এলাকাগুলোতে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করছেন। গত শুক্রবারও তারা সিলেট শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তারা গণসংযোগও করেন। গত শুক্রবার সিলেট শহরতলীর শাহপরান এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি জুমার নামাজের পর স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে গণসংযোগও করেন। এ সময় তিনি নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এলাকার মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নের বিষয়েও খোঁজখবরও নেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলুও নতুন নতুন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যস্ত রয়েছেন। বিশেষ করে নতুন নতুন ওয়ার্ড এলাকায় খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে তিনি দাওয়াত পেলেই ছুটে যাচ্ছেন। কামরানপুত্র হিসেবে শিপলু যেখানেই যাচ্ছেন সেখানে পিতার সূত্রে তিনি সমাদর পাচ্ছেন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদের টার্গেটও নতুন নতুন ওয়ার্ড। নগরীর পূর্ব অংশে দীর্ঘদিন ধরে তার এবং তার পরিবারের আধিপত্য রয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক যোগাযোগের কারণে এসব এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। নগরীর টিলাগড় থেকে শাহপরান, টিলাগড় থেকে কুশিঘাট এবং টিলাগড় থেকে বালুচর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত এলাকায় আজাদের অবস্থান সুসংহত। এসব এলাকায় আজাদ সব সময়ই বিচরণ করেন। গত শুক্রবার আজাদ নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া মুক্তিরচক এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এবং নামাজের পর তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অধ্যাপক জাকির হোসেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এবার মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। নগরীর ধরাধরপুর সহ কয়েকটি এলাকায় অধ্যাপক জাকির গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে দলের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। সিলেট নগরে আপাতত দৃশ্যমান হচ্ছেন এই চারজন প্রার্থী। এর বাইরে আরও কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন। আলোচনায় থাকলেও দৃশ্যমান হচ্ছেন না। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তবে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- এবার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে থাকতে পারে চমক। সিলেট আওয়ামী লীগের বলয়ের বাইরে থেকে দেয়া হতে পারে মেয়র প্রার্থী। ইতিমধ্যে এ নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছে সিলেটে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি ঘোষণা দিয়ে অংশ না নেয়ায় এ পর্যন্ত দলটির কোনো প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচারণায় নেই। পরিস্থিতি বুঝে তারা ভোটের মাঠে নামবেন এমনটাই জানিয়েছেন নেতারা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn