সুনামগঞ্জে ভবন নির্মাণ না করেই বিল উত্তোলন!
সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জের কুরবাননগর ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে’র নির্মাণ কাজ অর্ধেকও হয়নি গত নয় বছরে। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬০ লাখ টাকার বিলের ৩৪ লাখই উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। এলাকাবাসী এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। গত নয় বছরেও শেষ হয়নি এর নির্মাণ কাজ। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ বিল উত্তোলন করে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিলেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বারবার চিঠি লিখেও কোনো সদুত্তর পায়নি জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এ কারণে নির্মাণাধীন দু’তলা বিশিষ্ট ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরিত্যক্ত ভবনে অস্থায়ীভাবে খড়-ধান মজুত করে রাখেন স্থানীয় কৃষকরা। ভবনের ছাদে অনেকেই ভেজা ধান শুকান। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়া ও কেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ভবন ৬০ লাখ করে এক কোটি ৮০ লাখ টাকায় তিনটি ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’ নির্মাণের কাজ পায় সিলেটের ‘মেসার্স নর্থ সুরমা কন্সট্রাকশন’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনটি ভবনের মধ্যে একটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, একটি সিলেটের গোয়াইনঘাট ও অন্যটি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগরে। কমলগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সুনামগঞ্জের কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, অর্ধেক কাজ করার পর কাজ ফেলে ঠিকাদার চলে গেছেন। এখন পরিত্যক্ত থাকায় ভবনটির ক্ষতি হচ্ছে। এদিকে ঠিকাদার নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ করেছেন। ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে ২৬ লাখ ছাড়া বাকি টাকার বিল উত্তোলন করেছেন তিনি।
কুরবাননগর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মইন উদ্দিন বলেন, নির্মাণাধীন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে ইউনিয়নবাসী সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ব্রাহ্মণগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এলাইছ মিয়া বলেন, অনেক বছর ধরে এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কেন এ ভবনের কাজ বন্ধ আছে, বিষয়টি স্থানীয় কেউ জানেন না। কুরবাননগর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বরকত বলেন, সাত বছর ধরে দেখছি এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ। কেন কাজ বন্ধ হয়ে আছে বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ সঠিক কিছু বলতে পারেনি। কাজ বন্ধ থাকায় মানুষ চরম ক্ষুব্ধ। এটা চালু হলে আমার ইউনিয়নবাসীর উপকার হতো। আমরা দাবি জানাই, কাজ শেষ করে দ্রুত চালু করা হোক। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, এ ভবনের নির্মাণ কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন করছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেখান থেকেই দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করলেও ঠিকাদারকে বিল প্রদান করায় ঠিকাদার অসমাপ্ত ভবন ফেলে চলে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি অন্তত ১১ বার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি লিখেছি; কিন্তু কোনো কর্ণপাত করছেন না তারা। এ কেন্দ্র চালু না হওয়ায় এলাকার মানুষ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।
সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, সুনামগঞ্জের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাদের সম্পূর্ণ বিল দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। জামানত ছাড়াও প্যাকেজের বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার আগামী ১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। যদি কাজ শেষ না করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার আজিজুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা কারণে ভবনের কাজ শেষ করতে পারিনি। একই প্যাকেজে তিনটি ভবনের কাজ ছিল। অন্য দুটির কাজ শেষ করে ভবন হস্তান্তর করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ভবনের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ করেছি। ৩৪ লাখ টাকার বিল পেয়েছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এর কাজ শুরু করব।