ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘণ করত: যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পঙ্গু সাংবাদিক আল-হেলালের আবেদন উপেক্ষা করে বেআইনীভাবে অধীনস্থ ৩ কর্মচারীকে ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত দেয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দূর্নীতি কমিশনে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন সাংবাদিক আল-হেলাল। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারনা ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন সাংবাদিক আল-হেলাল।

জানা যায়,সুনামগঞ্জ পৌরসভার ষোলঘর মৌজার ১১২নং জেএলস্থিত,১১৪ খতিয়ানের, ৫১ দাগের ৭ শতক জায়গার উপর ২টি টিনসেড ভিটেবাড়ি রয়েছে। যাহা ভিপি মোকদ্দমা নং ২৮৬/৬৬-৬৭ এর আওতাভূক্ত পৃথক ২টি ভিটেবাড়ি। বর্ণিত ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন অব: তাজুল ইসলাম বীরপ্রতিক,সুনামগঞ্জ ৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি বেগম  ইকবাল,সুনামগঞ্জ ৩ আসনের এমপি এম.এ মান্নান,সুনামগঞ্জ ২ আসনের এমপি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সুনামগঞ্জ ১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে গত ৬/৫/২০০৯ ইং তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূ :ম/শা-৬/অর্পিত/বিবিধ/০৪/২০০৫/-২৫৩ নং স্মারকে আল-হেলালের আবেদন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ভিপি বাড়ী দুটির যেকোন একটি বন্দোবস্ত লাভের জন্য ২০১৬ইং সনের ১৭ জানুয়ারী বর্তমান জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের কাছে লিখিত আবেদন করেন আল-হেলাল। আবেদনের কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা যায়,আবেদনকৃত ঐ ভিটেবাড়ীতে জেলা প্রশাসক থাকার জন্য জায়গা দেন জেলা প্রশাসকের বাংলোর বাবুর্চি মীরু হাওলাদার আলী, জারীকারক মছদ্দর আলী এবং বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের আয়া,মহিলা কল্যাণ কেন্দ্রের ঝাড়–দার ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অফিস সহায়ক পারুল আক্তারকে। সরকারের দখলীয় ভিটেবাড়ীতে বেআইনী বসবাসকারী সরকারী কর্মচারীদের উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসক,বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রীপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে গত ২৪ আগস্ট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন আল-হেলাল। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক উক্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি যখন তদন্তাধীন তখন গত ১১ মে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক তার অধীনস্থ ৩ কর্মচারীকে বাড়ী দুটি বন্দোবস্ত দেন। এর আগে  ৯ মে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের বাসভবনে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের আদেশের কপি দেখিয়ে অনুরোধ জানালে জেলা প্রশাসক আল-হেলালকে আবারো আবেদনের নির্দেশ দিলে ঐদিনই লিখিত আবেদন করেন আল-হেলাল। কিন্তু একাধিকবার আবেদন নিয়েও জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম তাকে ভিটেবাড়ী ২টির মধ্যে একটিও বন্দোবস্ত দেননি। জেলা প্রশাসক তাকে জানান,আমার স্ত্রী বাবুর্চি আলীকে একটি বাড়ী দেয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করলে আমি স্ত্রীর অনুরোধ ফেলতে পারিনি। আলীকে একটি দিলে অন্যটি আমাকে দিন বলে আল-হেলাল আবারো অনুরোধ জানালে মুখে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবে ২ কর্মচারী মছদ্দর আলী ও পারুল আক্তারকে অপর বাড়ীটি বন্দোবস্ত দিয়েছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, ভিপি ভিটেবাড়ীর বন্দোবস্ত গ্রহীতা জেলা প্রশাসকের বাংলোর বাবুর্চি মীরু হাওলাদার আলী মাদারীপুর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে সে ঢাকা শহরে রিক্সা চালাতো। তার কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ভূয়া নাগরিকত্ব ও ৮ম শ্রেণি পাশের জাল সনদ দিয়ে সরকারী চাকুরী ভাগিয়ে নিয়ে সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বনগাও এলাকায় খাস জমি বন্দোবস্ত নেয়। সুনামগঞ্জ পৌরসভার ওয়েজখালী-গনিপুরে এবং পাটানপাড়ায় তার রয়েছে বিশাল ভূসম্পত্তি। ভিপি সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ভিটেবাড়িতে বেআইনীভাবে স্বপরিবারে বসবাসকারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জারীকারক/চেইনম্যান মছদ্দর আলী পিতামৃত আব্বাছ আলী সাং বুড়িস্থল,ইউনিয়ন মোল্লাপাড়া,থানা ও জেলা সুনামগঞ্জ ৭১ এর রাজাকারের পুত্র। তার বড় ভাই আজমান আলীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের অপরাধ তদন্ত বিভাগে দায়েরকৃত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একজন দেশদ্রোহী রাজাকারের পুত্র ও রাজাকারের ভাই হিসেবে মছদ্দর আলী অবৈধভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরী ভাগিয়ে নিয়ে দেখার হাওড়ে ১ একরসহ বিভিন্ন মৌজায় খাস খতিয়ানের জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে এসব জায়গা অন্যের কাছে বিক্রি করে অবৈধভাবে কোটিপতি হয়েছে। বিশাল ভূসম্পত্তির অধিকারী হওয়া স্বত্তেও সরকারী ভিপি বাড়ী কোন খুটির বলে ৩ কর্মচারী বন্দোবস্ত পেয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনার মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন আল-হেলাল।
অভিযোগের ব্যাপারে আল-হেলাল বলেন,আমি একজন পঙ্গু সাংবাদিক ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি ২৭ বছর সাংবাদিকতা করে কিছুই করতে পারিনি। জেলা প্রশাসকের কাছে মাত্র ১টি বাড়ী বৈধ পন্থায় বন্দোবস্ত চেয়েছিলাম। তিনি বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। আমি জানি বিদায়ের সময় সকল জেলা প্রশাসকরাই এরকম অনিয়ম করে থাকেন। কিন্তু কেউই পার পাননা। এর আগে জেলা প্রশাসক মনোয়ার হোসেনও এরকম অনিয়ম করে শেষে সুনামগঞ্জের আদালতে এসে জেল খেটেছেন। আমি জেলা প্রশাসকের এ জঘন্য আচরন,জালিয়াতি ও প্রতারনার জন্য তিনি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নিিত দমন আইনে মামলা দায়ের করবো। এক্ষেত্রে এক ইঞ্চি পরিমান ছাড় দেবোনা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn