সুরমায় পানি কমলেও বাড়ছে হাওরে
শহীদনুর আহমেদ:: বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। সুরমায় পানি কমলেও বাড়ছে জেলার বিভিন্ন হাওর ও শাখা নদীতে। ফলে হাওর তীরবর্তী উপজেলাগুলোর নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে বন্যার বয়াবহতা জেলাব্যাপী ছড়িয়ে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা করছেন ভোক্তভোগীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ষোলঘরস্থ সুরমা নদীর রেডিং পয়েন্ট ছিল বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটারে। শনিবার দিন ও রাতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ২৪ ঘন্টায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমার বিপদসীমা ১১ সে.মি. কমে বিপদসীমা দাঁড়িয়েছে ৭৬ সে.মিটারে। গত ২৪ ঘটায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৭ মি.মি। আরো দুয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে সুরমা নদীর পানি ফের বাড়ারও শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানাযায়, গত ৬দিন টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সুরমানদীর তীরবর্তী সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা প্লাবিত হয়। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুরমা নদীর পানি বেড়ে জেলার অন্যান্য নদী ও হাওরে প্রবেশ করে। এতে বন্যায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ছাতক, জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রাম। ইতোমধ্যে জেলার ৭০টি ইউনিয়ন লক্ষাধীক মানুষ পানিবন্ধি অবস্থায় রযেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা ফরিদুল হক। বন্যা কবলিত এলাকায় চাল, শুকনা খাবার ও নগদ অর্থ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রতি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তাছাড়া জেলার ১০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারে নির্দেশা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে লোক উঠার খবর পাওয়া গেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ১২২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে । পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলয়েট , স্যালাইন, বিনামূল্যে ওষুধ সংগ্রহ ও বন্যার্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে মেডিকেল টিম কাজ করবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস।
এদিকে বন্যায় আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, জেলার সবকয়টি উপজেলার টি ইউনিয়ন বন্যায় কবলিত। প্রতিটি ইউনিয়নে চাল, শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বন্যাশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে তালিকাভুক্ত সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উঁচু অঞ্চল থেকে পানি নেমে এখন নিচের এলাকাগুলোকে প্লাবিত করছে। বন্যায় আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিরি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন শনিবার সন্ধ্যায় পর্যন্ত সুরমা নদীর বিপদসীমা ৮৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রবাহিত হলেও রবিবার সন্ধ্যায় ৬ টা পর্যন্ত তা কমে ৭৬ সেন্টিমিটারে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৭ সেন্টিমিটার। আরো একদু দিন বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।