সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই সন্তানসহ এক নারীকে হত্যার ঘটনায় ওই নারীর স্বামী হিফজুর রহমানকে (৩৫) রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। রোববার আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফজুর রহমানকে শনিবার গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গোয়ানঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার সিলেট ওসমানী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান হিফজুর। এরপর তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি গোয়াইনঘাট আমলি আদালতের বিচারক অঞ্জন কান্তি দাস হিফজুরের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন। গোয়ানঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের ধারণা হিফজুরই তার স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাই রিমান্ডে আনা হয়েছে।

গত বুধবার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩০), তার দুই সন্তান মিজান (১০) এবং তানিশা (৩)-এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘর থেকেই হিফুজরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে হিফজুর পুলিশ প্রহরায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিলো পুলিশ। এদিকে, খুন হওয়ার সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন আলিমা বেগম। ফলে পুলিশের মতে, তিনজন নয়, ওইদিন খুন করা হয়েছে আদতে চারজনকে।

শনিবার দুপুরে সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হিফজুর রহমানের স্ত্রী নিহত আলিমা বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। ঘাতকের বটির কোপে তার গর্ভে থাকা পাঁচ মাসের সন্তানও মারা গেছে। সে হিসেবে এ ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ভ্রূণহত্যার অভিযোগও আনব।

এই হত্যাকান্ডের পর ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলো সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এখন পুলিশের সন্দেহের তীর আহত হিফজুরের দিকেই। রোববার (২০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ছাড়পত্র দেওয়া হয় হিফজুরকে। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিলীপ কান্ত নাথ আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন। হিফজুরের আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয়। ওই রাতে মামার বাসায় থাকায় বেঁচে যায় ওই দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে আফসান। পরদিন নিহত নারীর বাবা আয়ুব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও হিফজুরের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ওই দিন এ বাড়িতে কোনো বহিরাগত লোক প্রবেশের আলামত পাওয়া যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং স্ত্রী ও দুই সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই হিফজুর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পেশায় দিনমজুর হিফুজর তার মামার বাড়িতে ঘর বানিয়ে থাকেন। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী গ্রামে। হিফজুর যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরটি তার মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত।

বুধবার সকালের ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। দেরি দেখে প্রতিবেশিরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এসময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা। প্রতিবেশিরা জানান, দরজার সিটকিনি খোলাই ছিলো। ভেতরে প্রবেশ করে খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে পুলিশে খবর দিলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করেন এবং হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn