স্বর্ণপদক নয়, চাকরি চাই
নাসরিন জাহান জয়া, বেরোবি (রংপুর): প্রধানমন্ত্রী পদক ২০১৪ সালে পেয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত অর্থনীতি বিভাগের স্বল্পনা রাণী ও কলা অনুষদভুক্ত বাংলা বিভাগের আরিফা সুলতানা পল্লবী অন্যতম। কলা অনুষদ থেকে পদকপ্রাপ্ত আরিফা সুলতানা পল্লবীর জন্ম গঙ্গাচড়া উপজেলার বিদিতর নামের গ্রামে। তার বাবা আতাউর রহমান ও মা রাজিয়া সুলতানা।
পল্লবী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে সম্মান শ্রেণীতে অর্জন করেন ৩.৪৭। বর্তমানে তিনি ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুরের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা পল্লবী প্রধানমন্ত্রী পদক পেয়েও হতাশায় ভুগছেন। কারণ ছোটবেলা থেকেই শিক্ষকতার প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা কাজ করতো তার। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। আর তাই দেশের নামকরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও এসে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম থেকেই সেভাবেই পড়াশোনা করেন এবং বিভাগের মধ্যে প্রথম হন পল্লবী। কিন্তু স্বপ্নের পথে ঠিকমত এগিয়ে সব ঠিক থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। পদক পাওয়ার অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে সোজা সাপ্টা উত্তরে পল্লবী বলেন, ‘ভালো না! আমি স্বর্ণপদক চাই না। আমি চাই চাকরি! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্যই এত কষ্ট করেছি, আমার যোগ্যতাও কোনো অংশে কম না! তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে চাকরি দেবে না কেন? আমরা তাই শিখেছি যা তারা আমাদের শিখিয়েছে! তাহলে তারা কী শেখালো আমাদের যে তারাই আমাদের নিয়োগ দিচ্ছেন না! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের যদি জায়গা না দেয় তাহলে অন্য কেউ কেন দেবে!’ প্রসঙ্গত, সারা দেশের কলা অনুষদ থেকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ২৩৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে একমাত্র তিনিই বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী।
একই আক্ষেপের কথা জানালেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত অর্থনীতি বিভাগের স্বল্পনা রাণী। তিনিও বললেন, ‘স্বর্ণপদক না দিয়ে একটা চাকরি দিলে বেশি ভালো হতো।’ স্বল্পনা রাণীর বাসা রংপুর শহরের দর্শনার আক্কেলপুর নামের গ্রামে। তার বাবা একজন রিকশাচালক ও মা গৃহিনী। তার বাবা বিনয় চন্দ্র মহন্ত ও মা নন্দ রাণী। দুই ভাই বোনের মাঝে তিনি ছোট। সম্মান শ্রেণীতে অর্জন করেন ৩.৭৫৩ ও মাস্টার্সে ৩.৭৮। স্বল্পনা জানান, তার বাবা রিকশাচালক। অনেক কষ্ট করে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে এতদিন এতটা পথ পাড়ি দিয়ে ঠিক পথে এসেও শেষে ফলাফল শূন্য। তিনি চান একটি চাকরি। কিসের জন্য বা কাদের জন্য জীবনের তিনটি বছর সেশন জটে হারিয়ে ফেললেও পাননি যথাযোগ্য প্রাপ্তি। ‘জীবন থেকে এই এতগুলো সময় চলে গেল কেউ পারবে তা ফেরত দিতে?’ – আক্ষেপ নিয়েই ছুঁড়ে দিলেন এই প্রশ্ন। তার এই প্রশ্নের উত্তর কেইবা দেবে?