স্বামীকে হত্যা পর লাশ টুকরা করে লুকানোর চেষ্টা, স্ত্রী গ্রেফতার
নিজ বেতনের টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্বামী রাবিকুল ইসলামকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাতের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার করেছে স্ত্রী জীবন্নাহার। বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী (গিলারচালা) এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী জীবন্নাহার তার স্বামীকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে। সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শাসসুন্নাহার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) রাসেল শেখসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার (এসপি) শাসসুন্নাহার জানান, রাবিকুল ইসলাম স্ত্রী জীবন্নাহারকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী (গিলারচালা) এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রাবিকুল স্থানীয় হাউ আর ইউ পোশাক কারখানায় স্টোর লোডার পদে চাকরি করতেন। স্ত্রী জীবন্নাহার পাশের মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুইং অপারেটর পদে চাকরি করে। তাদের মধ্যে প্রায়ই বেতন নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। এ নিয়ে জীবন্নাহার স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। বুধবার রাতেও তাদের মধ্যে বেতন নিয়ে বিরোধ হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পর মেরে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন রাবিকুল। এসময় জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে তিনি খাট থেকে নিচে পড়ে যান। পরে মাথায় ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে স্বামী অচেতন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর স্বামীর লাশ ওয়্যারড্রবে লুকিয়ে রাখে। পরে সকালে সে কর্মস্থলে চলে যায়। রাত ১১টায় কর্মস্থল থেকে ফিরে রান্না ঘর থেকে বঁটি এনে দেহ থেকে মাথা, দুই হাত ও হাঁটু থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন করে। পরে বিচ্ছিন্ন মাথা, হাত ও দুই পা বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের ময়লার ড্রেনে ফেলে রাখে। দেহ আরেকটি বস্তায় ভরে মেঘনা কম্পোজিট কারখানার সীমানা প্রাচীরের পশ্চিম পাশের বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে রাখে। এলাকাবাসী শুক্রবার বেলা ১১টায় বাঁশ ঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রী জীবন্নাহারকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন। পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার উলামাকান্দি গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে রাবিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ঘটনার সময় মেয়ে রোজা পাশেই জেবুন নাহারের ছোট বোনের বাসায় ছিল। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম জানান, রাবিকুল হত্যার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে স্ত্রী জীবন্নাহারকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অভিযুক্ত স্ত্রী জীবন্নাহারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।