সুনামগঞ্জের হাওরাবাসীর জীবিন জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। হাওরে একের পর এক সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না। এতে করে চরম ক্ষতি শিকার হচ্ছে জেলার ৩ লক্ষাধিক অসহায় কৃষক পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে এক ফসলী বোরো ধান চাষাবাদ আর বর্ষায় মাছ ধরেই জীবন-জীবিকা পরিচালিত হয় জেলার হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার ৮০ভাগ মানুষের। এই হাওরের সাথেই জড়িয়ে আছে শহরের ব্যবসায়ী,চাকুরীজীবি সহ সকল স্থরের লোকজন। গত কয়েক বছর ধরেই এই জেলার হাওরবাসীর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রকৃতির বৈরী আচরন। ফলে অকাল বন্যায় হাওর পানিতে ডুবে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে কৃষক। বর্তমানে হাওরের পানি না কমা,শৈত প্রবাহসহ প্রকৃতি যেন এখন বিরুপ আচরন করছে অসহায় হাওরবাসীর সাথে। ফলে চরম দূর্ভোগে রয়েছে হাওরবাসী।

জানাযায়, জেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরে উৎপাদিত এক ফসলী বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল লাখ লাখ হাওর পাড়ের কৃষক। জেলার সর্বমোট আবাদী জমির পরিমান ৩,৭৯,২১৬ হেক্টর। গত বছর প্রায় ২লাখ ১৫হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকার বেশি। এই সম্পূর্ন ফসলেই অকাল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাড়ে ৩লক্ষাদিক কৃষক পরিবার। ফসল হারানো কৃষকরা এখন বোরো মৌসুমে নতুন করে হাওরকে ঘিরে বাচাঁর স্বপ্নও দেখছেন। কিন্তু এবারো তাদের স্বপ্ন ভাঙার আশংকায় তারা। চলতি বছর জেলায় ২লাখ ২২হাজার ৫৫২হেক্টর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকার বেশী। এছাড়াও এখানকার হাওরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। বর্ষায় মাছ ধরা আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো জমি চাষ করাটা এখানকার হাওরবাসীর বংশ পরমপরায়। এখানকার হাওরে উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা পূরন করেও দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাড়াও দেশের বাহিরে রপ্তানি করা হয়।

জানাযায়,এ জেলায় উৎপাদিত মাছ ও ধান দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখেছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে হাওরের এমন গুরুত্বপূর্ন অবদান থাকার পরও জলবায়ু পরির্বতনের প্রভাব,কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার,ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের দূষন,অবাধে মৎস্য নিধন,অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রভৃতির কারনে হাওরের পরিবেশ এখন বিপন্ন। ফলে নাব্যতা হারাচ্ছে হাওরাঞ্চলের নদ-নদী। ধবংশ হচ্ছে হাওরের জলজ প্রানী ও উদ্ভিদের আবাস্থল এবং জীববৈচিত্র। এরপরও এখানকার হাওর ও জলাভূমি গুলোর বিপন্ন প্রায় পরিবেশের উন্নয়নে র্দীঘ দিনেও কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। ফলে প্রতি বছর আগাম বন্যা কিংবা সেচের মৌসুমে পানির অভাব হাওরের বিস্তীর্ন এলাকার ফসল উৎপাদনকে মারাতœক ভাবে ব্যাহত করছে। এক ফসলী এই এলাকার একমাত্র ফসলটি সঠিক ভাবে ঘরে তুলতে না পারায় এবং উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হাওরের কৃষকগন প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গত বছর অকাল বন্যায় বোরো ফসলহানী হাওর পাড়ের কৃষকের মেরুদন্ড ভেগে দিয়েছে। এই বোরো ধানের উপরেই ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া,সংসারের খোরাকি,হাট-বাজার ও ছেলে-মেয়েদের বিয়ে সহ সকল কাজ নির্ভর করে। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারন সম্পাদক পিযুস পুরকাস্ত টিটু,ব্যবসায়ী আবুল কালামসহ জেলার সচেতন হাওরবাসী জানান,গত বছর জেলার সবকটি হাওরের বোরো ধান হারিয়ে জেলার সাড়ে ৩লক্ষাধিক কৃষক সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। বিক্রি করে দেয় শেষ সম্বল হালের গরু। বোরো ধান অকাল বন্যায় পানিতে ডুবে যাওয়ার পর হাওরের মাছ ধরে জীবিকা নির্ভাহ করার স্বপ্ন দেখলেও সেখানে দেখা দেয় মহামারী। মাছ মরে ভেসে উঠে হাওরে হাওরে। এরপরও এই সংকট কাটিয়ে উঠে হাওরের মাছ ধরার জন্য গেলেও এর উপর চলে ইজারাদারদের নানান বাঁধা। এছাড়াও এই জেলায় গড়ে উঠেনি এখনও কোন শিল্প-কলখারকানা।

তাহিরপুরের কৃষক খেলু মিয়া,সাদেক আলী,সবুজ মিয়া,অপু তালুকদার সহ জেলার বিভিন্ন হাওর পাড়ের কৃষকগন বলেন,হাওরে প্রকট দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করতে হয় হাওরবাসীকে। বাধ্য হয়ে ঐসব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবার ছেড়ে বাধ্য হয়ে প্রিয় এলাকা আর বাড়ি-ঘর নিজ সন্তান,মা,বাবাসহ সবাইকে ছেড়ে পন্যের মত শ্রম বিক্রি হাটে নিজেকে পন্য হিসাবে দাড়ঁ করতে ঢাকা,সিলেটের ভোলাগঞ্জ,ঢাকা দক্ষিন,চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। এতে করে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে অকাল বন্যা,বর্ষায় হাওর পাড়ের বাড়ি-ঘরে ভাঙ্গন,মৌসুমী বেকারত্ব ও বিভিন্ন সমস্যার কারনে এ জেলার হাওরাঞ্চল থেকে অসহায় কৃষক পরিবারের ২লক্ষাধিক সদস্য নিজ গ্রাম ছেড়ে ভিন্ন স্থানের বাসিন্দা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান,আমার উপজেলায় হাওরবাসীর স্বার্থে সকল কাজ সমাধানে সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn