হাওরে কপাল খুলেছে নেতার পোড়ার আশঙ্কা কৃষকের
চৌধুরী মুমতাজ আহমদ- গেলবার আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে ডুবে গিয়েছিল সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার সোনালি ধান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম ও ঠিকাদারদের দুর্নীতির কারণে দুঃস্বপ্নের একটি বছর কেটেছে হাওর পাড়ের কৃষকের। গতবার ঠিকাদারে ডুবিয়েছিল হাওরের ফসল। ঠিকাদারে ভরসাহীন হওয়ায় এবার হাওরের ফসলরক্ষার বাঁধ নির্মাণে পুরোপুরি ভরসা হয়ে ওঠে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। তবে বেঁধে দেয়া সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি পিআইসিগুলো। প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রাক্কলন তৈরিতে বিলম্বের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায়ই এমন লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারণেও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আগের বারের ফসল বিপর্যয়ের কারণে এবার বরাদ্দও বেশি এসেছে। সব মিলিয়ে এবার বরাদ্দ এসেছে ১২২ কোটি টাকা। গত বছর এ বরাদ্দ ছিল ৬৮ কোটি টাকা। প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দের পর বাঁধ নির্মাণের কাজ আশা জাগাতে পারেনি হাওরের খেটে খাওয়া মানুষকে। হাওরের কৃষককে আশ্বস্ত করতে না পারলেও বিশাল টাকার এ যোগানে কপাল খুলেছে প্রভাবশালীদের। দুর্নীতি ও অনিয়মের কাজের মাধ্যমে পকেট ভারী করছেন তারা। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বেশ কিছু পিআইসি সভাপতিকে আটক করেছে পুলিশ।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায় গত মৌসুমে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বড় ৩৬টি হাওরসহ সুনামগঞ্জের অর্ধশত হাওরের ফসলরক্ষার জন্য ৯৬৪টি বাঁধ প্রকল্পের কাজ চলছে ৯৬৪টি পিআইসির মাধ্যমে। একেকটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। হাওরের প্রকৃত কৃষক এবং হাওরে যাদের জমি আছে তাদের সমন্বয়ে পিআইসি গঠন করে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও এ কাজের সঙ্গে মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই জড়িত। কাঁচা টাকার হাতছানি থাকায় কৃষকদের সামনে রেখে তারাই পেছন থেকে সবকিছু করছেন। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের মতো করেই চলছেন। ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অর্ধেকের মতো কাজ বাকি রয়েছে। প্রভাবশালীরা নির্মাণকাজের পেছনে থাকায় অনিয়মের প্রতিবাদ করেও ফায়দা মিলছে না। হাওর এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে কৃষক ও হাওর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় এবারও ফসল বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন হাওরপারের বাসিন্দারা। দেরিতে বাঁধের কাজ শেষ হলে তা পানির তোড়ে কতটুকু টিকতে পারবে এ নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ বছর দিরাই উপজেলার ৯টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ১শ’ ৩৫টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। বেঁধে দেয়া সময়ে কোনো প্রকল্পই ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। উপজেলার বরাম হাওর, চাপতির হাওরের বেশির ভাগ বাঁধেই অর্ধেকের বেশি কাজ হয়নি। জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ১০০টি পিআইসি গঠিত হয়েছে। বাঁধের কাজের জন্য বরাদ্দ এসেছে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। শনির হাওর, হালির হাওর, পাকনার হাওরের বাঁধসহ বেশিরভাগ বাঁধের কাজ সমাপ্ত হয়নি। কোথাও কোথাও মাত্রই শুরু হয়েছে বাঁধের কাজ। ধর্মপাশা উপজেলায় উপজেলার ১শ’ ৩৪টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চন্দ্রসোনার থাল, সোনামোড়ল, গুরমাসহ বিভিন্ন হাওরে এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও অনেকগুলোরই অর্ধেক কাজও হয়নি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে কৃষকের। উপজেলার বোরো ফসল রক্ষায় ৮০টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো এখনো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেনি। যার ফলে উপজেলার দেখার হাওর, জামখলা হাওর ও খাই হাওর, সাংহাই হাওর, কাচিভাঙ্গা হাওরের বাঁধের অসমাপ্ত কাজ এ উপজেলার বোরো ফসলকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার বোরো ফসল রক্ষায় ৯২টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। বরাদ্দ এসেছে সব মিলিয়ে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তবে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি এখানেও। উপজেলার নলুয়া হাওরের বেশ কয়েকটি বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বাঁধের কাজের জন্য মোট ৪১টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি এখনো। করচার হাওর, আঙ্গুরআলী হাওরের অনেক বাঁধই অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এছাড়া তাহিরপুর, শাল্লা উপজেলার হাওরগুলোর বাঁধের কাজেও একই রকম অবস্থা।
প্রকৃত কৃষকের পরিবর্তে প্রভাবশালীরা বাঁধের কাজের হর্তাকর্তা হওয়ায় কাজে এমন ধীরগতি ও অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সামায়ূন কবীর, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফুল মিয়া, উপজেলা যুবলীগ নেতা হাবুল মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মিয়া হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাঁধ নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
দিরাইয়ে বাঁধের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নূরে আলম চৌধুরী। গেলবারও তিনি উপজেলার চাপতির হাওরের বৈশাখী এলাকার বাঁধ নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেবার ওই বাঁধ ভেঙে ফসলের সর্বনাশ হলেও এবারো তার ওপর ভরসা রাখা হয়েছে। তিনি একা নন, বাঁধের কাজে যুক্ত আছেন তার দুই চাচা আলাউদ্দিন চৌধুরী ও আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, চাচাতো ভাই রিপন চৌধুরীও। এ উপজেলায় বরাম হাওরে বাঁধ নির্মাণের কাজে যুক্ত রয়েছেন তাড়ল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহমদ চৌধুরী। গত বছরের হাওর রক্ষা বাঁধ দুর্নীতি মামলার আসামি হওয়ায় নিজ নামে প্রকল্প নিতে না পারলেও আপন দুই ভাই আমিনুর রহমান চৌধুরী, আবিদুর রহমান চৌধুরী, চাচাতো ভাই জিয়াউর রহমান চৌধুরী, আফজল হোসেনের নামে চারটি প্রকল্প নিয়ে একাই কাজ করাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকিকুর রেজা তার ছেলে সোহেলের নামে প্রকল্প নিয়েছেন। বাঁধের কাজে আছেন সরমঙ্গল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উদগল হাওরের মাছুয়ার খারা প্রকল্পের সভাপতি দুলাল মিয়া। জগদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ছুবা মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জগদীশ সামন্তের ছেলে উপজেলা যুবলীগ নেতা অঞ্জন সামন্ত, করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুকেশ বর্মণও প্রকল্প কমিটির সভাপতি। কুলঞ্জ ইউপি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ তহুর আলম, সৈয়দ ইয়াউর রহমান ও রাড়ইল গ্রামের ছাদ মিয়া, যুবলীগ নেতা চান মিয়া প্রকল্প কমিটির সভাপতি। যুক্ত আছেন আওয়ামী লীগ নেতা মতছির মিয়া চৌধুরী, আবদুস সালাম। কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান, চরনারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রতন কুমার দাস ও করিম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলামের ভাগ আছে বাঁধের কাজে।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা মানবজমিনকে বলেন, নির্ধারিত ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ না হলেও আমার নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লার সবক’টি বাঁধের কাজ শেষের পথে। ৭৫ থেকে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যাবে। পিআইসিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই প্রাধান্য পেয়েছেন-এমন অভিযোগের জবাবে সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা বলেন, কমিটি করেছেন ইউএনওরা। আমি কোনো কমিটিতে বসি নাই।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বললেন, নীতিমালার আলোকেই জেলা- উপজেলা কমিটিগুলো পিআইসি গঠন করে দিয়েছে। নীতিমালায় লেখা নেই রাজনীতিবিদেরা পিআইসিতে থাকতে পারবেন না। তিনি বলেন, পিআইসিতে সরকার দলীয় নেতারা যেমন আছেন বিরোধীদলীয় নেতারাও আছেন। পানি সংক্রান্ত একটি সভায় রয়েছেন উল্লেখ করে এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন জেলা প্রশাসক। বক্তব্য জানতে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বারবার তাকে ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় এবারও ফসল বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন হাওরপারের বাসিন্দারা। দেরিতে বাঁধের কাজ শেষ হলে তা পানির তোড়ে কতটুকু টিকতে পারবে এ নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ বছর দিরাই উপজেলার ৯টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ১শ’ ৩৫টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। বেঁধে দেয়া সময়ে কোনো প্রকল্পই ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। উপজেলার বরাম হাওর, চাপতির হাওরের বেশির ভাগ বাঁধেই অর্ধেকের বেশি কাজ হয়নি। জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ১০০টি পিআইসি গঠিত হয়েছে। বাঁধের কাজের জন্য বরাদ্দ এসেছে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। শনির হাওর, হালির হাওর, পাকনার হাওরের বাঁধসহ বেশিরভাগ বাঁধের কাজ সমাপ্ত হয়নি। কোথাও কোথাও মাত্রই শুরু হয়েছে বাঁধের কাজ। ধর্মপাশা উপজেলায় উপজেলার ১শ’ ৩৪টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চন্দ্রসোনার থাল, সোনামোড়ল, গুরমাসহ বিভিন্ন হাওরে এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও অনেকগুলোরই অর্ধেক কাজও হয়নি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে কৃষকের। উপজেলার বোরো ফসল রক্ষায় ৮০টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো এখনো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেনি। যার ফলে উপজেলার দেখার হাওর, জামখলা হাওর ও খাই হাওর, সাংহাই হাওর, কাচিভাঙ্গা হাওরের বাঁধের অসমাপ্ত কাজ এ উপজেলার বোরো ফসলকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার বোরো ফসল রক্ষায় ৯২টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। বরাদ্দ এসেছে সব মিলিয়ে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তবে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি এখানেও। উপজেলার নলুয়া হাওরের বেশ কয়েকটি বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বাঁধের কাজের জন্য মোট ৪১টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি এখনো। করচার হাওর, আঙ্গুরআলী হাওরের অনেক বাঁধই অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এছাড়া তাহিরপুর, শাল্লা উপজেলার হাওরগুলোর বাঁধের কাজেও একই রকম অবস্থা।
প্রকৃত কৃষকের পরিবর্তে প্রভাবশালীরা বাঁধের কাজের হর্তাকর্তা হওয়ায় কাজে এমন ধীরগতি ও অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সামায়ূন কবীর, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফুল মিয়া, উপজেলা যুবলীগ নেতা হাবুল মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মিয়া হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাঁধ নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
দিরাইয়ে বাঁধের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নূরে আলম চৌধুরী। গেলবারও তিনি উপজেলার চাপতির হাওরের বৈশাখী এলাকার বাঁধ নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেবার ওই বাঁধ ভেঙে ফসলের সর্বনাশ হলেও এবারো তার ওপর ভরসা রাখা হয়েছে। তিনি একা নন, বাঁধের কাজে যুক্ত আছেন তার দুই চাচা আলাউদ্দিন চৌধুরী ও আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, চাচাতো ভাই রিপন চৌধুরীও। এ উপজেলায় বরাম হাওরে বাঁধ নির্মাণের কাজে যুক্ত রয়েছেন তাড়ল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহমদ চৌধুরী। গত বছরের হাওর রক্ষা বাঁধ দুর্নীতি মামলার আসামি হওয়ায় নিজ নামে প্রকল্প নিতে না পারলেও আপন দুই ভাই আমিনুর রহমান চৌধুরী, আবিদুর রহমান চৌধুরী, চাচাতো ভাই জিয়াউর রহমান চৌধুরী, আফজল হোসেনের নামে চারটি প্রকল্প নিয়ে একাই কাজ করাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকিকুর রেজা তার ছেলে সোহেলের নামে প্রকল্প নিয়েছেন। বাঁধের কাজে আছেন সরমঙ্গল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উদগল হাওরের মাছুয়ার খারা প্রকল্পের সভাপতি দুলাল মিয়া। জগদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ছুবা মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জগদীশ সামন্তের ছেলে উপজেলা যুবলীগ নেতা অঞ্জন সামন্ত, করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুকেশ বর্মণও প্রকল্প কমিটির সভাপতি। কুলঞ্জ ইউপি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ তহুর আলম, সৈয়দ ইয়াউর রহমান ও রাড়ইল গ্রামের ছাদ মিয়া, যুবলীগ নেতা চান মিয়া প্রকল্প কমিটির সভাপতি। যুক্ত আছেন আওয়ামী লীগ নেতা মতছির মিয়া চৌধুরী, আবদুস সালাম। কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান, চরনারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রতন কুমার দাস ও করিম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলামের ভাগ আছে বাঁধের কাজে।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা মানবজমিনকে বলেন, নির্ধারিত ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ না হলেও আমার নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লার সবক’টি বাঁধের কাজ শেষের পথে। ৭৫ থেকে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যাবে। পিআইসিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই প্রাধান্য পেয়েছেন-এমন অভিযোগের জবাবে সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা বলেন, কমিটি করেছেন ইউএনওরা। আমি কোনো কমিটিতে বসি নাই।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বললেন, নীতিমালার আলোকেই জেলা- উপজেলা কমিটিগুলো পিআইসি গঠন করে দিয়েছে। নীতিমালায় লেখা নেই রাজনীতিবিদেরা পিআইসিতে থাকতে পারবেন না। তিনি বলেন, পিআইসিতে সরকার দলীয় নেতারা যেমন আছেন বিরোধীদলীয় নেতারাও আছেন। পানি সংক্রান্ত একটি সভায় রয়েছেন উল্লেখ করে এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন জেলা প্রশাসক। বক্তব্য জানতে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বারবার তাকে ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।