হাওরে ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনের তাগিদ রাষ্ট্রপতির
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে হাওর এলাকার ফসলের নতুন জাত এবং আবাদের নতুন কৌশল উদ্ভাবনের জন্য সরকারের পাশাপশি বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টদের গবেষণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হাওর এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনা করে নতুন জাত ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। এ কাজে গবেষণা খুবই জরুরি।” শনিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির নিজস্ব ভবনের উদ্বোধন ও জেয়াফত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার কিশোরগঞ্জের সন্তান আবদুল হামিদ এই গবেষণার কাজে ময়মনসিংহ সমিতিকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বলেন।রাষ্ট্রপতি বলেন, “বৃহত্তর ময়মনসিংহের বড় একটা অংশ হাওর অঞ্চল। হাওর এলাকায় কৃষকের একটি মাত্র ফসল বোরো ধান। এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকের একমাত্র ফসল স¤পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল কৃষক চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিনযাপন করছে। ইতোমধ্যে হাওর এলাকার বহু মানুষ জীবিকার সন্ধানে নিজেদের ভিটেবাড়ি ছেড়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়েছে।” তিনি বলেন, “সহায়-সম্বলহীন এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের কল্যাণে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় বিত্তবান ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, এ বছর হাওর এলাকার পানি এখনো নামেনি বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ফলে ওই এলাকার কৃষকের একমাত্র ফসল বোরো চাষ এবার সময়মত করা যাবে কি না- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মার্চে আগাম বন্যার শুরুতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে যাওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। “পরিদর্শনকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে বন্যা পরবর্তী করণীয় স¤পর্কে মতবিনিময় করি। বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।” দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “রাজনৈতিক আদর্শ ও মতের ভিন্নতার কারণে আমরা বিভিন্ন দল করে থাকি। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে সকলেই এক ও অভিন্ন। তাই দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি আমি বৃহত্তর ময়মনসিংহের উন্নয়নে এ অঞ্চলের শিল্পপতিদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।” রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নৌ-পথের ব্যাপক ভূমিকা থাকলেও কালের পরিক্রমায় নদী-নালাগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নৌপথের পরিধি ক্রমেই কমে আসছে। “স্থানীয় যোগাযোগসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তাই এসব ব্যাপারেও সকলকে ভাবতে হবে। স্থানীয় উন্নয়নে টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে হবে এবং তা কাজে লাগাতে হবে। তা হলেই এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।” গতবছর নভেম্বরে ময়মনসিংহ সমিতির নিজস্ব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন আবদুল হামিদ। এ বছর তিনি সেই ভবনের উদ্বোধন করলেন। সমিতির সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের মহাসচিব গাজীপুরের এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ভবন নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোখলেছুর রহমান ও সহ-সভাপতি আবদুল হান্নান খান বক্তব্য দেন।